জর্জ মাইকেল শুধু প্রেম নয়, গেয়েছেন প্রতিবাদের গানও
জর্জ মাইকেলের নাম শুনলেই অনেকের মনে ভেসে ওঠে ‘কেয়ারলেস হুইসপার’ এর রোমান্টিক সুর, ‘লাস্ট ক্রিসমাস’-এর স্মৃতিমাখা প্রেম। কিন্তু প্রেমের ওই মায়াবী কণ্ঠই একদিন হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ভাষা। তিনি শুধু ভালোবাসার গল্প শোনাননি, প্রশ্ন তুলেছেন সমাজে চলে আসা বৈষম্য আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে। গানের অঙ্গনকে করেছেন মুক্তচিন্তার প্ল্যাটফর্ম। ‘প্রেয়িং ফর টাইম’, ‘শুট দ্য ডগ’ কিংবা ‘ফ্রিডম! নব্বই দশকের প্রতিটি গান যেন ছিল সমাজের খোলস ভাঙার এক সাহসী প্রচেষ্টা। তাই বলা যায়, জর্জ মাইকেল কেবল একজন গায়ক নন; তিনি এক প্রতিবাদী শিল্পী, যিনি গানের মধ্য দিয়েই উচ্চারণ করেছেন নিজের অবস্থান। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে ফিরে দেখা যাক গানের এক বিপ্লবীর জীবন। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
-
১৯৬৩ সালের এই দিনে ইংল্যান্ডের ইস্ট ফিঞ্চলিতে তার জন্ম। এই তারকার জন্মনাম ছিল গিওর্গিওস কিরিয়াকোস পনাইয়োতোউ।
-
সাইপ্রাস থেকে আসা তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, আর ইংরেজ মায়ের কাছ থেকে পাওয়া মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই হয়তো তাকে গড়ে তুলেছিল এক অন্যধারার শিল্পী হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল প্রবল আগ্রহ। টিনএজেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, গানই হবে তার জীবনের লক্ষ্য।
-
৮০ এর দশকের শুরুতে অ্যান্ড্রু রিজলির সঙ্গে গঠন করেন পপ ডুয়ো ‘ওয়াহাম’। তরুণদের মাঝে তাদের গান ছিল যেন বিদ্যুৎ-চমকের মতো।
-
‘ওয়েক মি আপ বিফোর ইউ গো গো’, ‘লাস্ট ক্রিসমাস’, কিংবা ‘এভরেথিং সি ওয়ান্টস’ গানগুলো রাতারাতি হিট হয়। কিন্তু জর্জ মাইকেল শুধু পপ তারকা হয়ে থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন গভীরতা, চেয়েছিলেন নিজস্ব কণ্ঠ।
-
১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ফেইথ’। এটি শুধুই একটি অ্যালবাম নয়, বরং এক ঘোষণাপত্র ‘তিনি এসেছেন নিজের পরিচয়ে দাঁড়াতে’। এই অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক ‘ফেইথ’ ও ‘ফ্যাদার ফিগার’ আজো ক্লাসিক। ফেইথ বিশ্বব্যাপী ২ কোটি কপি বিক্রি হয়। গানের মধ্যে ধর্ম, যৌনতা, সমাজ, প্রেম-সবই ছিল সাহসিকতার সঙ্গে গাঁথা।
-
নব্বইর দশকে জর্জ মাইকেল শুধু গানই করেননি, বরং নিজের যৌন পরিচয় নিয়ে মুখ খোলেন এবং এলজিবিটিকিউ প্ল্যাটফর্মে রূপ নেন এক সাহসী কণ্ঠে।
-
১৯৯৮ সালে তিনি প্রকাশ্যে সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তখনকার সমাজে এই স্বীকারোক্তি ছিল বিপ্লবের মতো। এরপর তার গানগুলোতে আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে প্রতিবাদী সুর।
-
‘আউটসাইড’, ‘শুট দ্যা ডগ’ কিংবা ‘প্রেয়ার ফর টাইম’ হয়ে ওঠে সামাজিক বঞ্চনা, রাজনৈতিক অবিচারের বিরুদ্ধে জবাব।
-
তারকা জীবন যেমন আলোয় ভরা, তেমনি অন্ধকারও কম নয়। মাদকে আসক্তি, আইনি জটিলতা, ব্যক্তিগত সংকট-সবই ছুঁয়ে গিয়েছিল তাকে। তবু তিনি কখনো নিজের ভুল ঢাকেননি। বরং এসব নিয়েই সামনে এগিয়েছেন, বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
-
২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের রাতে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অনন্য শিল্পী। কিন্তু আজো যখন কেউ ‘কেয়ারলেস হুইসপার’ বাজায়, যখন কেউ ‘ফ্রিডম’ গায়-তখন যেন সেই মাইকেল আবার ফিরে আসেন।
-
জর্জ মাইকেল শুধু পপস্টার নন, তিনি ছিলেন এক সাংস্কৃতিক আইকন। গানের ভাষায় তিনি কথা বলেছেন ব্যক্তিত্বের স্বাধীনতা, লিঙ্গ পরিচয়, সামাজিক জবাবদিহিতা, ও ভালোবাসার। আজকের প্রজন্ম যখন নিজের পরিচয় নিয়ে লড়াই করে, তখন জর্জ মাইকেল হয়ে ওঠেন তাদের সাহস। তার গান শুধু শোনার জন্য নয়, বোঝারও জন্য।