ছাতা মাথায় নদী পার, বর্ষায় ফিরেছে বুড়িগঙ্গার প্রাণ
বর্ষার এক শান্ত দুপুর। মাথার ওপরে ছাতা, পায়ের নিচে কাঁদা ঘাট, আর সামনে থইথই পানিতে ভরা বুড়িগঙ্গা। দূরে দেখা যায় নৌকার সারি; একটা পাড়ি দিচ্ছে সদরঘাট থেকে, আরেকটা ভিড়ছে মিটফোর্ড ঘাটে। আশ্চর্য হলেও সত্য, আজ এই নদীর জলে নেই সেই চেনা দুর্গন্ধ। বরং জলের গায়ে যেন বৃষ্টির ফোঁটা নেচে বেড়াচ্ছে, ঢেউয়ের সাথে ছন্দ মিলিয়ে। এই দৃশ্য দেখে মনেই হয় না, এক সময়ের জীবন্ত বুড়িগঙ্গা আজকের দিনে কেবল দূষণের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বর্ষা যেন তার গায়ে জল ঢেলে আবার ফিরিয়ে এনেছে পুরোনো প্রাণ। ঢাকার বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নদী যেন আবার বলে উঠছে, ‘আমি এখনও আছি, আমি এখনও বাঁচতে চাই।’ ছবি: মাহবুব আলম
-
যেখানে আগে নদীর ধার ঘেঁষলেই নাকে আসত পচা বর্জ্যের গন্ধ, সেখানে এখন বর্ষার জলে ভেসে বেড়ায় নির্মলতা।
-
পানি বেড়েছে বটে, তবে তার সাথে বেড়েছে নদীর রূপ।
-
মাথার ওপর ছাতা ধরে, কেউ হেঁটে যাচ্ছে পাটুরঘাট থেকে মিটফোর্ড ঘাটে, আবার কেউ নৌকায় বসে এপার থেকে ওপারে পারাপার করছেন; কেউ কাজে, কেউ বা নিছক ঘোরার উদ্দেশ্যে।
-
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঢাকার জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর কেন্দ্র ছিল এই বুড়িগঙ্গা নদী। এক সময় তার জল ছিল টলটলে, নিখাদ। কিন্তু নগরায়ন, শিল্পবর্জ্য আর নাগরিক অবহেলায় সে রূপ ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
-
পানি হয়ে ওঠে কালো, ঘোলা। দুর্গন্ধে নৌকায় চড়া তো দূরের কথা, ঘাটের ধারে দাঁড়ানোও ছিল দুঃসাধ্য। সেই নদী এখন বর্ষার কল্যাণে যেন আবার একটু নিঃশ্বাস নিতে পারছে।
-
প্রকৃতি যেন তার নিজের হাতে নদীটাকে কিছুটা পরিষ্কার করে দিয়েছে, ঢেকে দিয়েছে অনেক বছরের ধুলোবালি, বর্জ্য আর দুঃখের চিহ্ন।
-
বৃষ্টির দিনে নদীর ধার ধরা মানে শুধু পানির ঢেউ দেখা নয়, এক ধরণের স্মৃতিচারণা, এক ধরণের মুগ্ধতা। পানির রঙ কিছুটা ধূসর হলেও তাতে মিশে আছে আকাশের ছায়া। মাঝির গলার সুরে মিশে আছে জলতরঙ্গের শব্দ। সেই সঙ্গে মাথার ওপরে টুপটাপ বৃষ্টি, আর ছাতার নিচে গল্পে মশগুল যাত্রীরা।
-
বর্ষায় বুড়িগঙ্গা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
-
বৃষ্টির জলে পলিথিন, কেমিক্যাল ধুয়ে গিয়ে কয়েকদিনের জন্য হয়তো দুর্গন্ধ কমেছে। কিন্তু সেটিই কি স্থায়ী সমাধান? বর্ষার সৌন্দর্য যেন না হয় একদিনের ফটোফ্রেম তাকে স্থায়ী করতে হলে দরকার বাস্তব পদক্ষেপ।
-
শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, আমাদের নাগরিক দায়িত্বও জরুরি। শিল্প বর্জ্য নির্গমন রোধ, প্লাস্টিক বর্জন এবং নদীপথ সচল রাখার মতো পদক্ষেপগুলো নিতে হবে এখনই। যেন আগামীর বুড়িগঙ্গা শুধু বর্ষাতেই নয়, সারা বছরই হয় দুর্গন্ধহীন, স্বচ্ছ ও সৌন্দর্যপূর্ণ।