ইতিহাসের ছায়ায় প্রকৃতির প্রশান্তি
কখনো কি মনে হয়েছে, দিনের শেষে একটু নিরিবিলি পরিবেশে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে চান? অথবা চান শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে গিয়ে ইতিহাসের কোনো নিঃশব্দ সাক্ষীর পাশে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে? এমনই এক পরম শান্তির স্থান জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সবুজে ঘেরা সুবিশাল প্রাঙ্গণ, পাখির ডাক, ঠান্ডা বাতাস আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক-এই জায়গাটি যেন একসঙ্গে ইতিহাসের গর্ব আর প্রকৃতির প্রশান্তি এনে দেয়। ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধ একদিনের ভ্রমণের জন্য নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি গন্তব্য, যেখানে সময় যেন কিছুটা ধীর হয়ে আসে, মনটা নিঃশব্দে ইতিহাসের গভীরে ডুবে যায়। লেখা: জান্নাত শ্রাবণী; ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত
-
ঢাকা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। যেকোনো পাবলিক বাস, প্রাইভেট গাড়ি, রাইডশেয়ারিং কিংবা বাইকযোগে সহজেই যাওয়া যায়। গাবতলী বা আসাদ গেট থেকে সাভারগামী বাসে উঠে ‘স্মৃতিসৌধ গেট’ এ নেমে পায়ে হেঁটেই প্রবেশ করা যায় মূল প্রাঙ্গণে।
-
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর সন্তানদের স্মরণে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্থপতি মইনুল হোসেনের নকশায় নির্মিত এই সৌধের উচ্চতা ১৫০ ফুট, এবং এটি সাতটি ত্রিভুজাকৃতির পিলারে তৈরি, যা দেশের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনকে প্রতীকায়িত করে। ১৯৮২ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। সৌধের প্রতিটি ইঞ্চি জুড়ে যেন ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।
-
স্মৃতিসৌধ শুধু ইতিহাসের নয়, প্রকৃতিরও এক অপূর্ব মেলবন্ধন। বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, জলাধার, ছায়াঘেরা গাছপালা ও শান্ত পরিবেশ আপনাকে এনে দেবে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি।
-
হাঁটতে হাঁটতে একদিকে যেমন দেখা মিলবে ফুলের গন্ধ, অন্যদিকে সৌধের স্থির সৌন্দর্য আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। পাখির কিচিরমিচির, হালকা বাতাসে পাতার শব্দ-সব মিলিয়ে যেন এক টুকরো শান্তি।
-
স্মৃতিসৌধের পাশেই রয়েছে একটি নয়নাভিরাম লেক, যেন প্রকৃতির আঁকা এক নিখুঁত জলচিত্র। লেকের স্থির জলে সৌধের ছায়া পড়ে তৈরি হয় আরেকটি নীরব সৌধ, জলের বুক জুড়ে ইতিহাসের প্রতিধ্বনি। হালকা হাওয়া, চারপাশের নীরবতা আর দূরে ভেসে আসা পাখির কিচিরমিচির সব মিলে এ যেন এক প্রশান্তির স্থান, যেখানে সময়ও যেন কিছুটা থমকে দাঁড়ায়।