নার্সারির চারা বিক্রি করেই সফল ইমদাদুল
ইমদাদুল হকের বয়স ৩৮। ঢাকায় ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকে ফিরে আসেন গ্রামে। শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। সেখান থেকেই ঘুরে গেছে এ তরুণের ভাগ্যের চাকা। তিনি এখন সফল কৃষক ও নার্সারি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। গত ৬ মাসেই নার্সারির চারা বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১২ লাখ টাকা। তার এমন সাফল্য প্রমাণ করে, ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে গ্রামেও গড়ে তোলা যায় স্বপ্নের কর্মজীবন। ছবি: মোহাম্মদ সোহেল রানা
-
ইমদাদুল হক সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কানসোল গ্রামের মরহুম বিশু মিয়ার ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি চার নাম্বার। তিনি এক সন্তানের বাবা। সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় রেস্টুরেস্টে শেফ হিসেবে কাজ করতেন। বেতন পেতেন মাসে ৪০ হাজার টাকা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পদের খাবার তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন।
-
চাকরিতে থাকা অবস্থায় গ্রামের বাড়ির আঙিনায় শখ করে রোপণ করেন বিভিন্ন জাতের ১০টি আমের চারা। এরপর একে একে হরেক রকম ফলের চারাও লাগান। কয়েক বছরের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করে। এ দৃশ্য তার মনে নতুন কিছু করার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলে।
-
মাত্র ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগেই শুরু হয় সবুজ যাত্রা। একসময় নতুন কিছু করার লক্ষ্যে চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন। গড়ে তোলেন ইমদাদ গার্ডেন নামে একটি নার্সারি প্রতিষ্ঠান।
-
ইমদাদুল হক শুধু একজন নার্সারি মালিক নন, হয়ে উঠেছেন এলাকার অনুপ্রেরণা। বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণ উদ্যোক্তা ও কৃষকেরা আসেন তার পরামর্শ নিতে। বাড়ির আঙিনায় ফলের গাছ ও বাহারি চারা দেখতে ভিড় করেন অনেকেই। এ তরুণের হাত ধরে অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন কৃষিকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্ন।
-
চাকরির চেয়ে নার্সারি ব্যবসায় সুন্দরভাবে চলতে পারেন ইমদাদুল। তার নার্সারিতে আম, লিচু, জাম, পেয়ারা, মাল্টা থেকে শুরু করে চায়না কমলা ও আঙুরের মতো আকর্ষণীয় জাতের চারা পাওয়া যায়। সারাদেশে চারা সরবরাহ করেন। বিশেষ করে চায়না কমলা ও আঙুরের চারা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বৃষ্টির কয়েক মাস সবচেয়ে বেশি চারা বিক্রি হয়। অনলাইন ও অফলাইনে চারা বিক্রি হয়। তবে অনলাইনেই বেশি সাড়া মেলে। গত ৬ মাসে ১২ লাখ টাকার মতো চারা বিক্রি করেছেন, যা একসময় কল্পনাতেও ছিল না।
-
নার্সারিতে একজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছেন তিনি। এ ব্যবসা তাকে শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই দেয়নি, দিয়েছে মানসিক প্রশান্তিও।
-
এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হননি ইমদাদুল। সার হিসেবে মূলত ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করেন, যা গাছের জন্য খুবই উপকারী। এতে গাছ রোগে আক্রান্ত হয় কম। গাছের বৃদ্ধি ও গুণগতমান ভালো থাকে। চারা তৈরি থেকে শুরু করে গাছ লাগানো, পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার-সব ক্ষেত্রেই যত্নশীল থাকার চেষ্টা করেন তিনি।
-
বাগানপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে ইমদাদুল হক বলেন, ‘কোনো কাজ শুরুতেই বড় আকারে না করা ভালো। ছোট পরিসর থেকে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এতে ঝুঁকি কম থাকে। সফল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। আমি নিজেও সেই পথে হেঁটেছি।’