২০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হচ্ছে সবজির চারা
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রাম। গোমতী নদীর অববাহিকায় বেলে-দোআঁশ মাটির উর্বর বীজতলা হওয়ায় সারাদেশের সবজি চাষিদের কাছে সমেষপুরের চারা পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তাই এক নামেই পরিচিত গ্রামটি। এখানে ফসলি মাঠে যতদূর চোখ যায়, শুধু সবজির চারা আর চারা। প্রতিটি জমিতে সারি সারি বেডে বাতাসে দোল খাচ্ছে নানা ধরনের সবজির চারা। ছবি: জাহিদ পাটোয়ারী
-
চারা উৎপাদনের কারণে এই গ্রামের ঐতিহ্য ও খ্যাতি অর্ধশত বছরেরও বেশি দিন ধরে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাস থেকে বেচাকেনা শুরু হলেও সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার উৎপাদন ও বেচাকেনা শুরু হয়েছে দেরীতে।
-
প্রান্তিক চারা চাষিদের কেউ জমি প্রস্তুত করছেন। কেউবা সবজির চারায় পানি ছিটাচ্ছেন। আবার কেউ বিক্রির জন্য তুলছেন চারা। কেউবা সেই চারা আঁটি বাঁধছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পাইকাররা। তারা গুনে গুনে চারা বুঝে নিচ্ছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন দৃশ্য দেখা যায় এ অঞ্চলে।
-
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে ৭০০-এর বেশি কৃষক চারা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। শুধু সমেষপুর নয় বুড়িচংয়ের ডাকলাপাড়া, কালাকচুয়া, কাবিলা ও নিমসার এলাকায়ও বড় আকারে চারা উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বরুড়া, চৌদ্দগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও চারা উৎপাদন ও বিক্রির কর্মকাণ্ড চলছে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
-
এই মৌসুমে প্রায় ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। এলাকার চারার মান ভালো এবং ফসল বেশি হওয়ায় দেশব্যাপি চাহিদা তুঙ্গে। এখানকার উৎপাদিত টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির চারা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। চাহিদার শীর্ষে আছে কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার চারা।
-
প্রতি পিস চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। চাষিরা এসব চারা কিনে জমিতে বপন করে ফসল উৎপাদন করেন। বীজ বপনের ২০ দিনের মাথায় চারা বিক্রি হয়ে বিট খালি হয়ে গেলে নতুন করে বীজ বপন করা হয়।
-
এভাবে প্রতি বছর ভাদ্র মাস থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ পর্যন্ত চলে এই কর্মযজ্ঞ। চারার মৌসুম শেষ হলে এসব জমিতে টমেটো, আলু, বেগুনসহ বিভিন্ন রবি ফসল উৎপাদন করেন কৃষকেরা।