কোবি ব্রায়ান্ট: বাস্কেটবলের মঞ্চে এক অবিনশ্বর কিংবদন্তি
২৩ আগস্ট, এই দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি ক্রীড়া ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা এক নামের জন্মদিন। বলছি কোবি বিন ব্রায়ান্টের কথা। তিনি এমন এক মানুষ, যিনি বাস্কেটবলের চৌহদ্দি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
১৯৭৮ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় তার জন্ম। কোবির বাবা জো ব্রায়ান্ট ছিলেন একজন প্রাক্তন এনবিএ খেলোয়াড়। ছোটবেলা থেকেই কোবির জীবনে বাস্কেটবলের ছোঁয়া লেগেছিল। তবে তার গল্প সহজ ছিল না। যখন তিনি ছোট, পরিবার ইতালিতে চলে যায় বাবার পেশাগত কারণে। কোবি ইতালিতে থেকে ছোটবেলায় ফুটবল খেলতেন, কিন্তু হৃদয়ের ভেতর বাস্কেটবলের জন্য ছিল এক অদম্য টান।
-
কোবি হাইস্কুল শেষ করেই সরাসরি এনবিএ ড্রাফটে নাম লেখান যা সে সময়ে বিরল ঘটনা। ১৯৯৬ সালে শার্লট হর্নেটস তাকে ১৩তম পিকে নির্বাচিত করলেও, দ্রুতই তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্সে ট্রেড হন। সেখান থেকেই শুরু এক অবিশ্বাস্য যাত্রা।
-
কোবি নিজেকে বলতেন ‘ব্ল্যাক মাম্বা’। এই নাম শুধু ডাকনাম ছিল না, এটি তার দর্শন। এক মারাত্মক ফোকাস, নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি আর প্রতিপক্ষকে হার মানানোর দৃঢ় সংকল্প। তার খেলায় ছিল শৃঙ্খলা, পরিশ্রম আর অদম্য মানসিকতা-যা তাকে বাস্কেটবলের এক অনন্য আইকনে পরিণত করে।
-
তার অর্জনের তালিকায় আছে পাঁচটি এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপ (২০০০, ২০০১, ২০০২, ২০০৯, ২০১০), দুই বার ফাইনালস এমভিডি, ১৮ বার অল-স্টার নির্বাচিত, দুটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক।
-
তবে কোবির সেরা অর্জন শুধু এই সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর জন্য প্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন, যারা বিশ্বাস করতো ‘মাম্বা মেন্টালিটি’ দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
-
২০১৬ সালে তিনি বিদায় নেন, কিন্তু শেষ খেলায় করলেন অবিশ্বাস্য কীর্তি ৬০ পয়েন্ট স্কোর। পুরো স্টেডিয়াম কেঁপে উঠেছিল তার নামের উল্লাসে। বিদায়ের পরও তিনি থেমে থাকেননি। শিশুদের জন্য বাস্কেটবল ক্যাম্প, লেখালিখি, এমনকি অস্কার জয়ী শর্ট ফিল্ম ‘ডিয়ার বাস্কেটবল’ সবকিছুতেই নিজের সৃজনশীল ছাপ রেখে গেছেন।
-
২৬ জানুয়ারি ২০২০। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কোবি ও তার মেয়ে জিয়ান্না চিরতরে বিদায় নেন। খবরটি শুধু বাস্কেটবলপ্রেমী নয়, পুরো বিশ্বকে কাঁদিয়েছিল। কারণ কোবি শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, তিনি ছিলেন এক অনুভূতি, এক জীবনদর্শন।