সরকারের দুর্নীতির কারণেই সারাদেশ করোনা সংক্রমিত
সরকারের দুর্নীতির কারণেই করোনাভাইরাস সারাদেশে সংক্রমিত বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১০জুলাই) বিকেলে উত্তরার নিজ বাসা থেকে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সিলেটে ‘এমএ হক স্বাস্থ্যসেবা’ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের চরম অবহেলা, অবজ্ঞা, অজ্ঞানতা এবং তাদের যে একটাই লক্ষ্য চুরি, সেই কারণেই আজ করোনা পরিস্থিতি এই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’
হজ ক্যাম্পে আইসোলেশনে থাকা প্রবাসীদের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে যারা ফেরত আসছেন তাদের টেস্ট করে সবাইকে করোনামুক্ত পাওয়া গেছে। অথচ বিবিসি বাংলা বিভাগের একজন সাংবাদিক তিনি সেই হজ ক্যাম্পে গিয়ে যাত্রীদের মধ্য একজনকে জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি (যাত্রী) জবাবে বলেছেন যে, আমাদের কোনো স্ক্রিনিংই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘দেখেন, কতটা দায়িত্বহীন হতে পারে এই স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কতটা উদাসীন হতে পারে সরকার। এত ঘটনার পরও, হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করার পরও, লক্ষ লক্ষ লোক আক্রান্ত হওয়ার পরও যখন একেবারে জীবন-জীবিকা সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে, সেই সময়ও তারা তাদের ন্যূনতম যে দায়িত্ব সেটা পালন করছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকার কোনো দরকার নেই। আমাদের নিজেদেরই চেষ্টা করতে হবে বাঁচার জন্য, আমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে যেন এটা (করোনাভাইরাস) না ছড়ায়, সংক্রামণ যেন না বাড়ে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের যেহেতু জনগণের সাথে সম্পর্ক নেই, জনগণের জীবন-জীবিকার প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই, সেই কারণে তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বাংলাদেশের অগণিত মানুষ এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে না।’
রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট সরবারহের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের প্রধান সাহেদ (মো. সাহেদ) সাহেব যে কোনো পরীক্ষা না করেই করোনা টেস্টের রেজাল্ট দিচ্ছে। এটা তো একদিকে জীবনের প্রশ্ন, মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যের সমস্যাও। অন্যদিকে যে পরিণতি...। আজ সমস্ত বিশ্বে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, এটা অলরেডি গ্লোবাল মিডিয়াতে চলে গেছে, এখন বাংলাদেশ থেকে কোনো মানুষের বিদেশে যাওয়া এমনকী বাংলাদেশের যারা যেতে পারছেন তারাও আর যেতে পারবেন না। সব এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।’
‘এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের। কারণ আমরা টেলিভিশনের ছবিতে যা দেখলাম- এই সাহেদ সাহেব তিনি সরকারের সব মন্ত্রী, দলের শীর্ষনেতাদের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক। শুধু এটা না, এমন বহু ঘটনা আছে। স্বাস্থ্য অধিদফরের দেখলাম, একজন মিঠু সাহেব যাকে বলা হচ্ছে তিনি নাকি গোটা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে গিলে ফেলেছেন!’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এর থেকে মুক্তির একটি মাত্র পথ, সেই পথ হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যারা আজ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদের সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’
করোনা পরিস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ ও পরিচালনায় সারাদেশের অসহায় মানুষের পাশে বিএনপির নেতাকর্মীরা কাজ করছেন বলেও জানান মহাসচিব।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের উদ্যোগে সদ্য প্রয়াত এমএ হকের স্মরণে ‘এমএ হক স্বাস্থ্য সেবা’কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। গত ৩ জুলাই চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জেলার সাবেক সভাপতি এমএ হক মারা যান।
সিলেট জেলা সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ডা. শামীমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কয়েস লোদীর পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হাসান জীবন, কলিম উদ্দিন মিলন, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা সভাপতি আলী আহমদ, প্রয়াত এমএ হকের ছেলে ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হকসহ সিলেট মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।
কেএইচ/এমএআর/পিআর