‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করোনা ঝুঁকি কমায়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২০

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এয়ার ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। এয়ার ইন ও এয়ার আউট পয়েন্টে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ব্যবহার করে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে পর্যপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রেখে আর্কিটেক্ট প্ল্যান করতে হবে।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান ও কোভিড-১৯ : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আশু করণীয়’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. রনক আহসান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল এবং কানাডার ডালহৌসি বিশ্বিবদ্যালয়ের গবেষক রবার্ট বাকাইনস্কি পিইঞ্জ। এছাড়া আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি ও বুয়েটের সাবেক সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবুল হোসাইন।

আমির হোসেন আমু বলেন, বিশ্বে কোভিড-১৯ অনেকটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আমাদের দেশ অত্যন্ত জনবহুল, আমাদের সম্পদও সীমিত। আর তাই আমাদের জন্য বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি। পল্লী অঞ্চলে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবহার সামান্য হলেও শহর অঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে, ব্যবসায়িক, সরকারি বা বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে এইচভিএসির (হিটিং ভ্যান্টিলেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং) ব্যবহার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তাই এয়ার কন্ডিশনিং করোনার ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে বা কতটা ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটি হালকা করে দেখার উপায় নেই। ঢাকা এতটাই জনবহুল যে আমাদের একটি ভুলে করোনার মারাত্মক বিস্তৃতি ঘটাতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে নতুন নতুন যেসব বিল্ডিং, হাসপাতাল, মার্কেট তৈরি হচ্ছে সেখানে হয়তো এইচভিএসি কিছুটা হলে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডিজাইন হচ্ছে। কিন্তু পুরনো স্থাপনাগুলো সেভাবে তৈরি করা হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিল্ডিং করা হয়েছে এক উদ্দেশ্যে, কিন্তু সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে। যেমন- প্রাইভেট ক্লিনিক, গার্মেন্টস ইত্যাদি। কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এই সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেশি।

আমু বলেন, একটি বিল্ডিং যেটি তৈরি হয়ে আছে, সেটিতে এইচভিএসির জন্যে পরিবর্তন, পরিমার্জন সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তাই আমাদের প্রকৌশলীদের খুঁজে বের করতে হবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পাশাপাশি এডহক ভিত্তিতে কোনো সমাধান বের করা যায় কি-না। আবার শুধু সমাধান দিলেই হবে না, সেটা যদি সাশ্রয়ী না হয় তাহলে আমাদের দেশে সরকারি, বেসরকারি কোনো পক্ষই সেটা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী হবে না, বা পারবে না। তাই আপনারা যারা পেশাজীবী আছেন, আপনাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে কেমন করে কম খরচে এই দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী সমাধানগুলো তৈরি করা যায় বা প্রয়োগ করা যায়।

আবদুস সবুর বলেন, বিশ্ব আজ মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত। সে দিক থেকে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে বিভিন্ন কারণে কোভিড-১৯ বেশি ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী কী করণীয় তা আমাদের গবেষকরা বিস্তারিত তুলে ধরবেন। এই ওয়েবিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে।

মূল প্রবন্ধে টেক্সাস ইউনিভার্সিটির গবেষক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, কোনো ভাইসরাসের ড্রপলেট যত বড় হয় তত তাড়াতাড়ি তা নিচে পরে যায়। কিন্তু কোনো ভাইসরাসের ড্রপলেট যদি ছোট হয় তাহলে এটা বাতাসে ভেসে বেড়াবে এবং তত বেশি সময় নিবে মাটিতে পড়তে। এসি করোনাভাইরাস ছড়ায় না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের বাইরে থেকে কোনো ভাইরাস যদি ভেতরে চলে আসে, তাহলে সেই ভাইরাস দ্রুত যেন বাইরে বের করা যায় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যার জন্য পর্যপ্ত ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের ফিল্টার রয়েছে যেগুলো দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানের জীবাণু বাইরে বের করে আনা সম্ভব। এর ফলে ঝুঁকি কমে আসবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় এসি ইনস্টল করলে বাতাস জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ থাকবে। আবদ্ধ জায়গায় বাতাস নিরাপদ বা জীবাণুমুক্ত রাখতে তিনটি প্রধান বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো হলো- ভেন্টিলেশন, এয়ার ফিল্টারেশন ও ডিস্ট্রিবিউশন।

তিনি আরও বলেন, কোনো স্থাপনার ভেতরের বাতাস যদি বাইরের বাতাস দিয়ে দ্রুত পরিবর্তন করা হয় তাহলে দ্রুত জীবাণু ধ্বংস করা সম্ভব, প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত জীবাণু বের করে ফেলা সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় ১০ বার করে বাতাস পরিবর্তন করলে ৩১ মিনিটের মধ্যে বাতাস নিরাপদ করা সম্ভব। তবে এসব কিছুই ইন্টেগ্রেটেড অর্থাৎ সমন্বিত উপায়ে করতে হবে।

এইউএ/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।