নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতপার ঠিকানা
দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়ে এবার আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সরকারি অনুদান সহায়তায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’। যার ইংরেজি নাম ‘হার ওন অ্যাড্রেস’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন প্রসূন রহমান।
এই ছবিটির হাত ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুললো বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা। সেই সুবাদে তারা মৌলিক আর জীবন মুখী গল্পে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ছবিটির নির্মাতাকে অভিনন্দিত করেছেন।
এদিকে প্রসূন রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্রের প্রায় নিয়মিত অংশগ্রহন থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে মুক্তির ব্যাপারটি বেশীর ভাগ চলচ্চিত্রের ভাগ্যেই ঘটেনা। বিশ্বায়নের যুগে নিজেরা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভোক্তা হয়ে বসে আছি, কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্ব-বাজারে নিয়ে যেতে আমরা এখনো সমর্থ হইনি। তাছাড়া ভঙ্গুর অবকাঠামোর কারনে সৃজনশীল কাজ নিয়ে নিজের দেশের প্রদর্শকদের কাছেই আমাদের জায়গা প্রায় শুন্যের কোঠায়।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বল্প বাজেটে আর্ন্তজাতিক বাজারে পাল্লা দেয়ার মতো প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা দুরূহ কাজ। তবে ইরানী চলচ্চিত্রের মতো নিজেদের মৌলিক গল্প নিয়ে নিশ্চয় বিশ্ববাজারে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। সম্পূর্ণ নিজস্ব যোগাযোগ ও প্রচেষ্টায় ‘সুতপার ঠিকানা’র আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রবেশের এই অর্জনটি আগামী নির্মাতাদের এই বাংলার জনজীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট মৌলিক গল্প নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গীতে চলচ্চিত্র নির্মাণে আরো আগ্রহী করে তুলবে বলে বিশ্বাস করি।’
সুতপার ঠিকানা ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অপর্ণা সেন। উপমহাদেশে নারী জীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত ‘সুতপার ঠিকানা’ নারী দিবসকে সামনে রেখেই পরিবেশক সংস্থা মালেশিয়াতে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে পরিবেশক ও প্রদর্শকের সম্মিলিত উদ্যোগে আজ চলচ্চিত্রটির দুটি বিশেষ প্রদর্শনী হবে কুয়ালালামপুরের মিডভ্যালিতে অবস্থিত গোল্ডেন স্ক্রিন সিনেমাস নামের একটি প্রেক্ষাগৃহে।
সরকারি অনুদানে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে দেশব্যাপী প্রদর্শনের এ সুযোগ ও সম্মাননাটিকেই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি বলে মনে করেন চলচ্চিত্রটির নির্মাতা প্রসূন রহমান। স্থানীয় চলচ্চিত্র অধিদপ্তর থেকে যথাযথভাবে সেন্সর প্রাপ্তির পর সেখানকার সবচেয়ে আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ গোল্ডেন স্ক্রিন সিনেমার মোট ৪টি মাল্টিপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কুয়ালালমপুরের ‘মিডভ্যালি’ ও ‘প্যাভিলিয়ন’ মেগা-মল, পেতালিং জায়ার ‘ওয়ান উতামা’ মেগা-মল এবং পেনাং-এর ‘গুর্ণে প্লাজা’র মাল্টিপ্লেক্সগুলো।
বাণিজ্যিক মুক্তি শেষে ‘সুতপার ঠিকানা’ মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের দুটি টেলিভিশনেও প্রচার হবে। এরপর মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে।
এ ছবিতে অপর্ণা ছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শাহাদাৎ হোসেন, মাহমুদুল ইসলাম, কুমার নিবিড় প্রমুখ। ছবিটির সংগীতায়োজন করেছেন কুমার বিশ্বজিৎ।
‘সুতপার ঠিকানা’র পর এ মুহূর্তে ‘ঢাকা ড্রিম’ নামে আরেকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রসূন রহমান। যার ৪০ ভাগ কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যেটি হবে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা ট্রিলজি’র প্রথম পর্ব।
এনই/এলএ/এমএস