চূড়ান্ত আন্দোলনেই সরকারের পতন: ১২ দলীয় জোট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০২৩

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি না মানলে এবং সব রাজবন্দিকে মুক্তি না দিলে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।

শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে তারা এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার এতে সভাপতিত্ব করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগ, বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে ১২ দলীয় জোট এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

নেতারা বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণে আন্দোলন করছি। আজকে নব্য-স্বৈরাচার সরকারের কবল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে রোজার মাসেও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। কারণ এ সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ ঠিকমতো রোজা রাখতে পারছে না। প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। মানুষ ভালো-মন্দ খেতে পারছে না। মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। অতএব এ সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তারা আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই সুযোগ দেশের মানুষ আর দেবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, রোজার মাসে আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। এ সরকার মানুষের বাকস্বাধীনতা, বেঁচে থাকার অধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই রাজপথে নেমেছি। জনগণের গণঅভ্যুত্থানে সরকার পদত্যাগ করতে ও নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যতবার ক্ষমতায় এসেছে তখনই অঘটন ঘটিয়েছে। ১৯৯৬ সালে তারা সচিবালয়ে আমলাদের উসকানি দিয়ে বিদ্রোহ ঘটিয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছে। কোনো সুষ্ঠু বিচার করতে পারেনি। ২০১০-২০১১ সালে সাধারণ মানুষের টাকা শেয়ার বাজার থেকে লুটে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এ সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি প্রকাশ করা যায় না। কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিচ্ছে। প্রথম আলোর সাংবাদিককে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও হয়নি। আসুন এ লুটেরা ও নিপীড়ক সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলি। যাতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই সঙ্গে সব কারাবন্দি সাংবাদিক ও আলেম এবং রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমাদের দফা এখন এক, এ সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। দেশে এখন সংস্কৃতির দুর্ভিক্ষ চলছে। সাধারণ মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে হলে, ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ক্বারি আবু তাহের বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন জাতির বিবেক সাংবাদিকদের পেছনে লেগেছে। কারণ মিডিয়া এ সরকারের সমস্ত অনিয়ম, দুর্নীতি ফাঁস করে দিচ্ছে। আমাদের আহ্বান থাকবে- সাংবাদিক সমাজ আপনারা কলম বন্ধ করবেন না। আজকে ভোটচোর সরকার রোজার আগেই প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়িয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ ইফতার করতে না পারে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের শওকত আমিন বলেন, দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। হবিগঞ্জে তিনজন না খেয়ে মারা গেছেন। মধ্যবিত্তরাও চালের ট্রাকের লাইনের পেছনে ছুটছেন। দেশ যেন ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। আজকে বাংলাদেশকে বন্দিশালায় পরিণত করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। সেজন্য কঠোর আন্দোলন আসছে।

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কেউ নিরাপদ নন। এমন কোনো অন্যায় ও দুর্নীতি নাই, যা তারা করেনি। এদের বিদায় দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ এলডিপির তমিজউদ্দিন টিটুর পরিচালনায় এসময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা মহিউদ্দীন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শওকত আমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খান আসাদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।