ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের নিবন্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় গত সোমবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যায় জড়িতদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘আনমাস্কিং টেররিস্টস ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদীদের মুখোশ উন্মোচন) শিরোনামের নিবন্ধটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো
নিবন্ধে জয় লিখেছেন, ন্যায় বিচারের জন্য বাংলাদেশিদের গভীর তৃষ্ণা রয়েছে। যুদ্ধের অস্ত্র হচ্ছে ধর্ষণ আর নির্যাতন। যখন পাকিস্তানের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা যুদ্ধে পরাজিত হতে যাচ্ছে, তখন তারা চিকিৎসক, শিল্পী, শিক্ষক ও লেখকসহ যত বেশি সম্ভব বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।
কিন্তু, এই নিকৃষ্ট নৃশংসতায় যারা লিপ্ত ছিল তারা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বিচার এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকটি ক্যু, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল সবচেয়ে নিষ্ঠুর যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব স্থানীয় পদে যাওয়ার পথ করে দিয়েছিল।
জয় লিখেছেন, নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই শেখ হাসিনা এই ধারার অবসান ঘটান। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেন। যা মূলত তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান গঠন করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরা বাতিল করেছিল।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মানদণ্ড রোম স্ট্যাটিউট অনুসরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। ফলে, এই বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়েছে। সে কারণেই, সুপ্রীম কোর্ট ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে।
এছাড়া, বাংলাদেশের আইসিটি হচ্ছে বিশ্বে একমাত্র যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যা তাদের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেমন, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ দিয়েছে।
জয় লিখেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত। বাংলাদেশিরা তা জানেন। দেশের বাইরের অনেকে আইসিটির সমালোচনা করে বলেছে যে, এই ট্রাইব্যুনালের মামলার অনেক আসামি বিরোধীদলের বিশেষ করে জামায়াত ইসলামীর সদস্য। উল্লেখ্য যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সাবেক সদস্যসহ অন্যান্য দলের সদস্যদেরও এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়েছে।
নিবন্ধে তিনি আরো লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধের তদন্তে যদি দেখা যায় যে জামায়াত সদস্যরা অপরাধ করেছে, সে ক্ষেত্রে তারা একটি বিরোধী দলের সদস্য হওয়ার কারণে কি বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যাবে? তাই বলে কি ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ও গণহত্যার শিকার এবং দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যদের জন্য কোন ন্যায় বিচার থাকবে না?
অন্যদিকে, জামায়াতের কিছু নেতার বিচার হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল এবং এই প্রয়াস রোধ করতে তৎকালিন পাকিস্তানি জান্তাকে সহযোগিতা করেছিল।
জয় উপসংহারে বলেছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ যে কোন ফাঁকা বুলি সহজেই বুঝতে পারে। এই যুদ্ধাপরাধীরা কি করেছিল, তা তারা নিজ চোখে দেখেছে। ট্রাইবুনাল কতটুকু স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে পরিচালিত সেটিও তারা ঘনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। তারা ন্যায় বিচারের জন্য এই সংগ্রামে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, এসব বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে এবং সে কারণেই তা চলবে এবং অব্যাহত থাকা উচিত।
এমএমজেড/এএইচ/পিআর