মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কাল্পনিক প্রচার

সম্প্রতি কিছু মহল থেকে মালয়েশিয়ায় ১২ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে কাল্পনিক প্রচারণা চালাচ্ছে, যা আদতে অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবতা থেকে অনেক দূরের একটি কল্পনা বলে মনে করছেন একাধিক কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার বিশ্লেষক সূত্র।
আফিয়া ওভারসিস (আর এল-১০১০) এর স্বত্বাধিকারী আলতাব খান বলেন, এ ধরনের মিথ্যা নিউজ প্রকাশ করার কারণে বাংলাদেশে অনেক শ্রমিকের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক শ্রেণির দালাল চক্র এই কাল্পনিক কথা বলে বিদেশগামী সাধারণ শ্রমিকের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন এবং অবৈধভাবে মেডিকেল করার চেষ্টা করছেন।
আগামী ১৫ মে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে একটি আলোচনা সভা হবে। সেই সভায় হয়ত সিদ্ধান্ত হতে পারে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কত শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রয়োজন। তাছাড়া মালয়েশিয়া সরকারের জাতীয় পলিসি বলছে, মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ১৫ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক আনতে পারবেন, বর্তমানে মালয়েশিয়া ১৫টি সোর্স কান্ট্রির ২৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। সে অনুযায়ী বর্তমানে মালয়েশিয়া সর্বোচ্চ তিন লাখ শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবে সোর্স কান্ট্রি থেকে। বাংলাদেশ হয়ত সর্বোচ্চ ২ লাখ লোক রপ্তানি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একটি সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করতে সিন্ডিকেট করার জন্য একশ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনেকেই সিন্ডিকেটের পক্ষে হাজার যুক্তিতর্ক খাড়া করছে। তার মধ্যে, বৈধভাবে কর্মী রপ্তানি করতে না পারলে ২০১৩ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। অর্থাৎ সাগর পথে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা অবৈধভাবে প্রবেশ করবে। কিন্তু মালয়েশিয়ার অধিকাংশ ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৩ সালের পরিস্থিতি আর ২০২৫ সালের পরিস্থিতি এক নয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এগুলো আসলে ইচ্ছাকৃত জল্পনা-কল্পনা, যার উদ্দেশ্য হলো সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দেওয়া এবং সিন্ডিকেটের স্বার্থে যায়। হতে পারে মালয়েশিয়ার অতিরিক্ত ১২ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন আছে, আর আমাদের শ্রমিকরা যেহেতু বিদেশে আসতে ভালো টাকা-পয়সা খরচ করতে পারে, তাই এটা হয়ত একটি যৌক্তিক অনুমান যে, সিন্ডিকেট কেবল বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই অন্তর্ভুক্ত করবে—নিজেদের লাভের জন্যই!
এ বিষয়ে এশিয়ার হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট অ্যান্ডি হল বলছেন, ‘১২ লাখ কর্মী নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বরং এটি মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা।’
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ইস্যুতে হল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) টি পুরোপুরি নতুনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এসব চুক্তির এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা সিন্ডিকেটদের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, অংশগ্রহণ সীমিতকরণ, খরচ বৃদ্ধি এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করার সুযোগ দিয়েছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে করণীয় সম্পর্কে হল বলেন, বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ এমওইউ সতর্কতার সাথে সংশোধন করতে হবে যেন সব ধরনের সিন্ডিকেটের প্রভাব থেকে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা মুক্ত করা যায়। দায়িত্বহীন, অনিয়মিত ও অনৈতিক নিয়োগ পদ্ধতি বহু শ্রমিকের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে তা বাতিল করতে হবে এবং মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস)-এর চুক্তি অব্যাহত থাকায় এ নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কারা অংশ নিতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে, ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া এফডব্লিউসিএমএস-এর হালনাগাদ ওয়েবসাইটে এখনো বাংলাদেশের অনুমোদিত এজেন্সিগুলোর তালিকা প্রকাশিত হয়নি, যদিও অন্যান্য সোর্স কান্ট্রিগুলোর তালিকা সেখানে রয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, সিন্ডিকেটের শর্ত মেনে নেওয়ার আলোচনা চলার কারণেই তালিকা প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে।
হল বলেন, শ্রমবাজার খোলার আগেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত এমওইউ পুনরায় পর্যালোচনা করে এমন সব ধারা বাদ দেওয়া, যা সিন্ডিকেট গঠনের সুযোগ সৃষ্টি করে।
এমআরএম/এমএস