থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সংঘাত নিরসনে
কুয়ালালামপুরে বিশেষ বৈঠকে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত নিরসনে আসিয়ানকে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিতে হবে। সোমবার কুয়ালালামপুরে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠক চলাকালে এ আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, চলতি মাসের শুরুতে বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয় দেশে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় এবং দুইপক্ষেই বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফনম পেনহ ও ব্যাংকক একে অপরকে সহিংসতা উসকে দেওয়া ও বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অন্তত ২২ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় ট্যাংক, ড্রোন ও ভারী কামান ব্যবহার করে উভয় পক্ষই হামলা চালিয়েছে।

বিশেষ বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে দেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামাদ হাসান
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামাদ হাসান বলেন, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গভীর সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক সংযোগের কারণে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সংঘাত কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিশেষ বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আসিয়ানকে যা কিছু প্রয়োজন, তাই করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য শুধু উত্তেজনা কমানো নয়; বরং বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা এবং মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সংলাপের পথ সুগম করা।
বিশ্লেষকরা জানান, চলতি মাসের সহিংসতা ছিল জুলাইয়ে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী। গত ২৮ জুলাই উভয় দেশ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার ঘটনার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষ চলছিল।
অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে দুই দেশ একটি যৌথ শান্তি ঘোষণায় সই করে। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই থাইল্যান্ড ওই চুক্তি স্থগিত করে, কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় নতুন স্থলমাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ তোলে। যা ফনম পেনহ অস্বীকার করে।

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সংঘাত নিয়ে উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরে আয়োজিত বিশেষ বৈঠকে একসঙ্গে ছবি তুলছেন আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
মোহামাদ হাসান আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এই জোট সংঘাতের পরিবর্তে সংলাপ, বিভেদের পরিবর্তে ঐক্য এবং সবার জন্য সমৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের দৃষ্টিতে আমরা যেমন এগিয়ে গেছি ও সমৃদ্ধ হয়েছি, তেমনি বিশ্ববাসীর চোখের সামনেই আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবিলা করতে হবে।
নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ায় সদস্যদেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনায় আসিয়ানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, চেয়ার-নেতৃত্বাধীন মধ্যস্থতা ও ঐকমত্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে সহিংসতা শুরু হলে চুক্তি কার্যকর করা বা উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসিয়ানের কার্যকর উপকরণ সীমিত থাকে।
সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস–ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক জোয়ান লিন বলেন, সংঘাত নিরসনে আসিয়ানকে বিবৃতি দেওয়ার গণ্ডি পেরিয়ে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এমআরএম/জেআইএম