পরবাসে এসে বুঝলাম সে আমার কত আপন

ওমর ফারুকী শিপন
ওমর ফারুকী শিপন ওমর ফারুকী শিপন , সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মাহফুজার সঙ্গে কথা বলতে পারব ভেবেই আমার সুখানুভূতি হয়। কত বছর পর তার কণ্ঠস্বর শুনতে পাব। মাহফুজা যদি আমাকে ইচ্ছেমতো গালাগালিও করে আমি চুপচাপ শুনে যাব। জবাবে বলার মতো আমার কাছে কিছুই নেই। দেশে থাকতে আমি রাগে সামান্য কথা বলেছিলাম তাই বলে সে আমার ১০০টা চিঠির জবাব দেয়নি। হায়রে ভালোবাসা, প্রবাসে এসেই বুঝলাম সে আমার কত আপন।

তার কাছ থেকে চিঠির জবাব না পেয়ে আমিও বোকার মতো প্রবাসে চলে আসি। কোনোদিন তার বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিইনি কেন সে চিঠির জবাব দিচ্ছে না। এমনো তো হতে পারে সে চিঠি পায়নি। আমার বার্তাবাহক চিঠি তার কাছে পৌঁছায়নি। দেশে থাকতে ভেবেছি সে আমার চিঠির জবাব দেয় না আমিও তার কোনো খোঁজ নেব না।

বিজ্ঞাপন

আসলে সে সময় মা-বাবা তাকে বউ হিসেবে গ্রহণ করতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি তার মা-বাবার আচরণ এতটাই ব্যথিত করেছিল যে আমি তাকে খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।

বুকে ফুঁ দিয়ে সাহস সঞ্চয় করে নম্বরে কল দিই। কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে একজন চিৎকার করে বলল হ্যালো কে বলছেন? আমি চুপিস্বরে বলি ভাই আমি জাহাঙ্গীর সিঙ্গাপুর থেকে বলছি। ভাই আপনি যেই হন সিঙ্গাপুরে আমার কেউ থাকে না। আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমি মন খারাপ করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফের কল দিই। একই জবাব। বোনকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি বোন আপনি কার নম্বর দিয়েছেন। এ যে আমার কথা শুনতেই চায় না।

বোন বলে, এটা হলো ওদের বাড়ির দারোয়ানের নম্বর। তাই হয়ত সে প্রয়োজনীয় মনে করেনি বলে তোর কল কেটে দেয়। তুই আবারও চেষ্টা করতে থাক।

আমিও নাছোড়বান্দা, বারবার চেষ্টা করতে থাকি। এভাবে কেটে যায় ছয় মাস। কিন্তু মাহফুজার সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ হয় না। সে কল রিসিভ করে উচ্চস্বরে হ্যালো বলে আমার পরিচয় জানতে চায়। আমিও প্রতিবারের মতো একই জবাব দিই। তার জবাব একই ভাই সিঙ্গাপুরে আমার কেউ থাকে না। এরপর টুট টুট সংযোগ বিচ্ছিন্ন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এবার বোনকে কল দিয়ে হতাশা প্রকাশ করি। সে বলল, মাহফুজার সঙ্গে কথা বলার আরেকটি উপায় আছে। কী উপায় আপা। তাড়াতাড়ি বলো। মাহফুজার চাচাতো বোনের মেয়ে আমার মেয়ের সাথে একই স্কুলে পড়ে। তার নম্বরে কল দিলে হয়ত মাহফুজার সাথে কথা বলা যাবে।

আপা তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন। মাহফুজার সঙ্গে কথা বলতে না পারলে আমি পাগল হয়ে যাব।

আপা মাহফুজার ভাগনির নম্বর দেয়। একদিন পর কল দেই। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে মেয়েটি মিষ্টি করে বলল? কে জাহাঙ্গীর মামা নাকি?

বিজ্ঞাপন

হ্যাঁ তুমি আমাকে চিনলে কি করে?

আমি সব জানি। আমি যে কল দিয়েছি তা নিশ্চিত হলে কীভাবে? আমি আপনার কলের অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার আপা আমাকে বলেছে আপনি যে কোনো সময় কল দেবেন।

আচ্ছা আমার ব্যাপারে কী জানো বলো?

বিজ্ঞাপন

আপনি মাহফুজা আন্টিকে খুব ভালোবাসেন। আর মাহফুজা আন্টিও আপনাকে খুব ভালবাসে। মিথ্যা কথা তোমার আন্টি আমাকে একটুও ভালোবাসে না।

আপনাকে ভালো না বাসলে এতদিন সে অবিবাহিত থাকত না। আপনার অপেক্ষায় চোখের জলে বালিশ ভেজাত না। আপনি আসবেন বলে পথ চেয়ে বসে থাকত না।

তুমি এতকিছু জানলে কি করে?

বিজ্ঞাপন

আমি নানুর বাড়ি গেলে সবসময় মাহফুজা আন্টির সঙ্গে ঘুমাই। উনি সারারাত শুধু আপনার গল্প করে। উনার মুখে আপনার কথা শুনে আমি দোয়া করতাম হে আল্লাহ তুমি এই দু’জনকে মিলিয়ে দাও।

তোমার আন্টি এখন কি করে?

সে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। এখন কি তোমার আন্টির সাথে কথা বলা যাবে? আমি এখন আমাদের বাড়ি। আগামীকাল রাত ৮টায় কল দিয়েন। আমি আন্টির সঙ্গে থাকব।

বিজ্ঞাপন

আমি আর কথা বাড়ালাম না। আগামীকাল কল দেব বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই।

ভাগ্নির মুখে মাহফুজার ব্যাপারে সব শুনে আমি নিজের অজান্তে কেঁদে ফেলি। আমার বিশ্বাস ছিল আমি যেমন তাকে ভেবে কাঁদি সেও আমাকে ভেবেই কাঁদে। আমি তাকে ভুলতে পারিনি সেও আমাকে ভুলতে পারবে না। আজ তা সত্যি প্রমাণিত হলো।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

আগামীকালের অপেক্ষায় আমার দিন কাটে না। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কখন আমি তার সঙ্গে কথা বলব।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com