শ্বাসফুল

যেখানে নিজের জীবনেরই নিশ্চয়তা নেই সেখানে আবার বাচ্চা!

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

ভাবছে সারাজীবন সে বাবা-মায়ের কথা শুনেছে, বাবা মার পছন্দেই বিয়ে করেছে। তার শ্বশুর শাশুড়িও বেশ ভালো। কিন্তু যেখানে নিজের জীবনেরই নিশ্চয়তা নেই সেখানে আবার বাচ্চা! যে ঝামেলার চাকরি করে, সারাক্ষণ ঝুঁকি।

সবাই ফিরলো বিকেলে, আসিফ দরজা নক করছে, জারা খুলে দিলো।

কি ব্যাপার, তুমি নাকি দুপুরে কিছুই খাওনি? শামসু বললো।

হ্যাঁ, ওদের থেকেই তো শুনবা, আমি যে বললাম শরীরটা খারাপ লাগছে, একবারও ফোন দিয়েছিলে আমাকে?

মানুষের ভালো করতে নাই, আমি ভাবলাম সবাই গেলে তুমি হয়তো ঘুমাবা, তাই ফোন না দেই ডিসটার্ব হবে, এখন সেটাও দোষ হয়ে গেলো! কি হয়েছে ঠান্ডা জ্বর?

জারা কথা না বাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো, শুধু বললো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে...

আসিফ খুব স্বাভাবিকভাবে বললো, ওহ ইনহেলার নিয়ে এসেছো?

নাহ, আমার কি অ্যাজমা আছে? ইনহেলার আনবো কেন?

তাহলে যে শ্বাসকষ্ট বলছো?

আমাদের বিয়ে হয়েছে তিন বছর, আমার শ্বাসকষ্ট থাকলে তুমি জানতে না?

আগের পর্ব পড়ুন: শ্বাসফুল আচ্ছা মা, বিয়ের আগে আসিফের সঙ্গে কি কারো সম্পর্ক ছিল?

আচ্ছা শরীর খারাপ অবস্থায় কেউ এত পেচায়? তোমার আসলে এই চাকরিটা করাই ভুল হয়েছে, সবকিছুতেই প্রশ্ন।

জারা পাশ ফিরে শুয়ে থাকলো, আসিফ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, একটু পরে শিরিন নাহার এসে জিজ্ঞাসা করলো এখন কেমন আছিস? চিকিৎসক ডাকতে বলবো?

না মা ভালো আছি, লাগলে তো আমি বলতাম...
এমনি একটু ঠান্ডা লেগেছে, তোমরা কেমন বেড়ালে?

ভালো, আসিফ অনেক জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখালো…
ছেলেটা কম কথা বলে কিন্তু ভালোই, হ্যাঁ রে তোর যত্ন আত্তি করে তো?

তোর বাবা বলছিলা জারাকে কেমন মন মরা দেখায়, আসিফের সঙ্গে ওর সম্পর্ক কেমন জানো?
আমি এমন গাধী এক মা খেয়াল করিনি তো

জারা হাঁচি দিলো, আলহামদুলিল্লাহ...
আম্মু যাও তো এখন ভালো লাগছে না পরে কথা বলি...

লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো।

সন্ধ্যায় নিগার সুলতানা এসে জারাকে নিয়ে গেলো খাওয়ার টেবিলে, রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলো...

দেশি কবুতর, আর পাঙ্গাস মাছ ভুনা, পটল ভাজি, লাউ চিংড়ি আর ডাল। মেহমানরা কেউ পোলাও খেতে রাজি না তাই এসব আয়োজন।

পরদিন বিকেলের ফ্লাইটে ফিরতে হবে, সুতরাং সবাই যেন দুপুরে খাবারের পরে রেডি হয়ে যায় এ বিষয়ে আসিফ সবাইকে বললো।

জারা শামছুকে এক কাপ চা দিতে বললো,
শামছু মাথা নেড়ে আসিফের দিকে তাকিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

বেশ ঠান্ডা চারপাশে, সবাই বিদায় নিয়ে যার যার রুমে ঢুকে গেলো, শুধু জারা আর আসিফ বসা...

এখন শরীর কেমন তোমার, শীত করছে না?

হুম, চা খেয়ে রুমে যাবো...

তুমি যাও, আমি চা নিয়ে আসছি

জারা আসিফের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের রুমে গেলো...

৩ মিনিট পর আসিফ ঢুকলো চা নিয়ে...

তুমি খাবে না?

না।

আমার কাপ থেকে একটু খাও...

নাহ, কাল ঘুম হয়নি, এখন আর চা না খাই, আজকে ঘুমাতে হবে।

তাহলে তো আমারও খাওয়া ঠিক না, ঘুমাতে হবে।

এক দুই চুমুক খাও, শামছু এত কষ্ট করে বানালো তোমার জন্য...

হুম, এই দুনিয়ায় শামছুদেরও কষ্ট আছে।

আসিফ জারার দিকে তাকালো, বললো শ্বাসকষ্ট কি বেড়েছে তোমার?

নাহ, এখন ঠিক আছি
আসো ঘুমাই...

হু, আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি, তুমি শুয়ে পড়ো

জারা ওর ব্যাগ থেকে লিটমাস পেপার বের করে চা তে ডুবালো, এরপর দেখে সব ব্যাগে রেখে শুয়ে পড়লো এবং ঘুমিয়েও গেলো।

বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো জারার, গায়ে হালকা জ্বর...
ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হবে।
সবাই নাস্তার টেবিলে, তাকে কেউ ডাকেনি, আশ্চর্য!
সে আস্তে ধীরে উঠে ফ্রেস হয়ে গেলো...

কিরে ঘুম ভাঙলো? আমি ডাকতে চেয়েছিলাম...
আসিফ মানা করলো।

হ্যাঁ ঘুম হয়েছে, ইস আজকে সকালে হাঁটতে যাওয়া হলো না।

অসুবিধা নেই, আমরা এখানে আবার আসবো, আসিফ বললো...

জারা চুপচাপ নাস্তা করলো,

কাল রাতে সারা ফোন দিয়েছিল, বললো তোকে পায়নি ফোনে।

হু, আমি তো আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, কেমন আছে ও…

ভালো, জানুয়ারির দিকে আসবে বললো।

আমি যাই, ব্যাগগুলো গোছায় দুপরে খাওয়ার পর বের হবো।

শামছু খিচুড়ি গরুর মাংস, ডিম ভাজি সালাদ করবে, এগুলো খাবে তুমি?

হু...

জারা বারান্দায় গিয়ে বসলো, আকাশ দেখছে....
দম আটকে কান্না আসছে, অনেক কষ্টে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে সে।

আসিফ বললো তোমার ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো জারা...
জারা উঠে ওর ঘরে গেলো।

আসিফ শামছু,পরিমল আর মালতিকে ধন্যবাদ ও বখশিস দিলো, সবাই রওনা হয়ে গেলো ঢাকার উদ্দেশ্য...

দুই বাবা-মা বেশ খুশী, বলাবলি করছে অনেকদিন পর একটা সুন্দর পারিবারিক ভ্রমণ হলো।

ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে সবাই যার যার গাড়ির ড্রাইভার খুঁজছে, সেই সময় বেশ কিছু পুলিশ এসে আসিফকে গ্রেফতার করলো, আসিফ খুবই অবাক! পুলিশকে সে জিজ্ঞাসা করলো কারণ কি? এটাও বললো তার ওয়াইফ ডিজিএফআইয়ের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর অফিসার জারা ইসলাম।

পুলিশ বললো জ্বি, উনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন,

আসিফ জারার দিকে তাকালো...

আসিফ তুমি যে ‘গে’ এটা আমাকে বললেও পারতে, আমি একটা শিক্ষিত মেয়ে, অবশ্যই এই ঠুনকো সংসার থেকে তোমাকে মুক্তি দিতাম, কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, তুমি আমাকে মেরে ফেলার পলিকল্পনা কেনো করলে? তাও বিষক্রিয়ায়! আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?

পাকা অভিনেতার মতো নাকফুলে বিষ মিশিয়েছো, চা তে বিষ মিশিয়েছো, আমার স্যান্ডেল আর জুতার ফিতাতে মিশিয়েছো, আমার মোবাইলে বিষ দিয়েছো। নাকফুলটা নাকে পরলে তো আমি শ্রীমঙ্গলেই মরে যেতাম, জুতার ফিতা বাঁধতে গিয়েই আমি তোমাকে ধুতুরার বীজ পকেটে ঢোকাতে দেখি, এরপর আমার হাতের বিষের গন্ধ প্রথমে নাকে লাগে, পরদিন গাছতলায় গিয়ে কনফার্ম হলো গন্ধের উৎস। আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে কি সুন্দর দুই বাড়ির বাবা-মাকে সঙ্গে নিলে বেড়াতে, সাধু সাজতে...
কিন্তু তুমি কি করে পারলে এতো ভয়ঙ্কর প্ল্যান করেও শামছুর সঙ্গে রাতের বেলা ওর বাসায় অন্তরঙ্গ হতে!
কীভাবে পারলে এতো নিচে নামতে...

এতো কষ্ট নিয়ে আমি কিভাবে বাঁচি? যদি বুঝতে এই কষ্ট বিষক্রিয়ায় চেয়েও ভয়ঙ্কর। একবারও তোমার মনে হলো না আমি নিজেই গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করি। নিজের ওপর অগাধ আস্থা রাখতে গিয়ে অন্যদের আমলেই নিলে না। এখন আমার মনে হচ্ছে কেন যে শ্বাসকষ্টে মরে গেলাম না, তাহলে অনন্ত এই বিষাক্ত যন্ত্রণাময় অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হতো না।

স্যার, বাকি কথা কোর্টে হবে, বলে পুলিশ অফিসার পুলিশের ভ্যানে করে আসিফকে নিয়ে গেলো হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে।

দুই বাবা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে

জারা জোরে জোরে কাঁদছে...
নিগার সুলতানা আর শিরিন নাহার তাকে দুপাশ থেকে ধরে রেখেছে।

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]