মালয়েশিয়ায় বাধ্যতামূলক হচ্ছে অভিবাসী কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড
মালয়েশিয়া সরকার দেশটির শ্রমবাজারে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। দেশটিতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে অভিবাসী কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা। চলতি অক্টোবর মাসের বেতন থেকেই এই নীতি কার্যকর হবে এবং নভেম্বর থেকে এর অবদান জমা শুরু হবে। মালয়েশিয়া গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা উভয়কেই মাসিক বেতনের দুই শতাংশ করে দিতে হবে, যা বিদেশি কর্মীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে অবসরকালীন সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করবে। তবে গৃহকর্মীরা এর আওতার বাইরে থাকবেন। শর্ত হলো, তাদের বৈধ পাসপোর্ট এবং মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ওয়ার্ক পাস থাকতে হবে।
কর্মচারী ভবিষ্যনিধি তহবিলের (ইপিএফ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জুলকারনাইন ওন বলেন, অভিবাসী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক অবদান দেশের সামাজিক সুরক্ষা এজেন্ডাকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ন্যায্য শ্রমবাজার নিশ্চিত করবে এবং সব জাতীয়তার কর্মীদের জন্য অবসরকালীন সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করবে।
আহমেদ জুলকারনাইন জানান, নীতির কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিদেশি কর্মী সংগঠন, নিয়োগকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন বিভাগের সঙ্গে ডেটা ও সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন উন্নত করার কাজ চলছে।
ইপিএফ জানিয়েছে, যেসব নিয়োগকর্তা এখনো নিবন্ধিত হননি, তাদের দ্রুত নিবন্ধনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধন অনলাইনে ইপিএফ ওয়েবসাইটে বা দেশের যে কোনো ইপিএফ অফিসে করা যাবে। অস্থায়ী ওয়ার্ক ভিজিট পাস ও কর্মসংস্থান পাসধারী বিদেশি কর্মীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কর্মীদের ইপিএফ অফিসে গিয়ে আঙুলের ছাপ আপডেট করতে হবে। নিয়োগকর্তারা আই-আকাউন (Employer) প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। অন্য পাসধারীদের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে ইপিএফ অফিসের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। অধিক তথ্যের জন্য ইপিএফের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের বিশেষ পেজে ভিজিট করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পদক্ষেপটি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করবে। এতদিন বিদেশি কর্মীরা ইপিএফ সুবিধার বাইরে ছিলেন, ফলে তাদের অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকতো। নতুন নীতি কার্যকর হলে প্রায় ২০ লাখের বেশি বৈধ বিদেশি কর্মী এর সুবিধা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। নিয়োগকর্তাদের সময়মতো নিবন্ধন, তথ্য হালনাগাদ ও সঠিক অবদান প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। এজন্য ইপিএফ এরই মধ্যে ইমিগ্রেশন বিভাগ ও অন্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করছে। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ মালয়েশিয়ার শ্রমনীতি সংস্কারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এমএমকে/জিকেএস