যুক্তরাজ্য
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিটকয়েন জব্দের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত চীনা নারী
যুক্তরাজ্যে এক চীনা নারীকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি ও অর্থপাচার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। পুলিশের হাতে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৬১ হাজার বিটকয়েন—যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (৬.৭ বিলিয়ন ডলার)।
দণ্ডপ্রাপ্ত নারী ঝিমিন চিয়ান, যিনি ইয়াদি ঝ্যাং নামেও পরিচিত, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি চীনে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি ইউয়ান হাতিয়ে নেন এবং সেই অর্থ বিটকয়েনে রূপান্তর করে লুকিয়ে রাখেন।
২০১৮ সালে এক তথ্যের সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যের পুলিশ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তদন্ত চালানোর পর ঝিমিন চিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে চীন থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন এবং চুরি করা অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে অর্থপাচারের চেষ্টা করেন।
মেট পুলিশের ডিটেকটিভ সার্জেন্ট ইসাবেলা গ্রোট্টো বলেন, তিনি পাঁচ বছর ধরে বিচারকার্য এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে গ্রেফতার করতে বহু দেশের সহযোগিতা ও জটিল তদন্তের প্রয়োজন হয়।
এ মামলায় তার সহযোগী জিয়ান ওয়েন নামের আরেক এক চীনা নারীকে গত বছর সাড়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওয়েন একসময় লন্ডনের রেস্টুরেন্টে থাকলেও পরে প্রতারণার টাকায় উত্তর লন্ডনের একটি বহুমূল্য ভাড়া বাসায় চলে যান। এর পরে তিনি দুবাইতে অর্ধমিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি দামের দুটি বাড়ি কিনেছিলেন।
পুলিশ ওয়েনের কাছ থেকে আরও ৩০ কোটি পাউন্ড সমমূল্যের বিটকয়েন উদ্ধার করে। চীনের সাময়িকী লাইফউইকের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ৫০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী বহু মানুষ ঝিমিন চিয়ানের কথিত বিনিয়োগ প্রকল্পে কোটি কোটি ইউয়ান ঢেলেছিলেন। প্রকল্পগুলোতে প্রতিদিনের লভ্যাংশ ও নিশ্চিত মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ব্যবসায়ী, ব্যাংককর্মী থেকে শুরু করে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারাও প্রতারিত হয়েছেন। অনেককে আত্মীয়-স্বজনই বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
চিয়ানকে অনেকেই ‘সম্পদের দেবী’ হিসেবে ডাকতেন।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের ডেপুটি চিফ রবিন ওয়েইয়েল বলেন, অপরাধীরা এখন ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ব্যবহার করছে তাদের অবৈধ সম্পদ গোপন ও স্থানান্তরের জন্য। এই মামলাটি প্রমাণ করে কী পরিমাণ বিপুল অর্থ এর মাধ্যমে পাচার হতে পারে।
চিয়ান বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং শাস্তির তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, তদন্ত এখনো চলমান। চীনে গঠিত একটি ক্ষতিপূরণ তহবিলের মাধ্যমে অনেক ভুক্তভোগী আংশিক অর্থ ফেরত পেয়েছেন।
এমআরএম