লকডাউন নয়, স্বাস্থ্যবিধির দিকে মনোযোগ দিন : তিন মার্কিন বিশেষজ্ঞ
করোনা বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা হলো লকডাউন। উন্নত দেশগুলোয় সেটি দীর্ঘসময় অব্যাহত রাখা যায়। কিন্তু উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে এটি বাস্তবসম্মত নয়। এ জন্য এসব দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন বিশেষজ্ঞ।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘ভ্যাকসিন আর ভ্যারিয়েন্টের প্রতিযোগিতার শেষ কোথায়?’ শীর্ষক আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২১ এপ্রিল) রাতে এই আলোচনা হয়। এতে অংশ নেন- বোস্টনের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রুহুল আবিদ, মন্ট্রিয়লের একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. শোয়েব সাঈদ এবং টরন্টো ভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত অণুজীব বিজ্ঞানী নিবেদিতা বিশ্বাস।
আলোচনায় বক্তারা করোনা পরীক্ষা বাড়ানো এবং যতো দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন। তারা বলেন, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এই তিনটি বিধিকে জীবনের অনুষঙ্গ করে তোলার জন্য মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া দরকার।
চলতি বছরে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী ড. রুহুল আবিদ বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবকিছু বন্ধ করে দিতে পারাটা কোভিডের সংক্রমণ রোধের জন্য আদর্শিক ব্যবস্থা। কিন্তু কানাডা-আমেরিকা বা পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে কোভিড মোকাবেলা করবে, বাংলাদেশ বা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ সেভাবে করতে পারবে না। তাদের নিজেদের পরিস্থিতি অনুসারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এবং গার্মেন্টসসহ স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় আনার তাগিদ দেন। বলেন, কোভিডের প্রথম ওয়েভে গার্মেন্টস, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বড় কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি। তাদের বয়স এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এবারের ভ্যারিয়েন্টটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই এটি কিভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফলে আগাম সতর্কতা দরকার।
তিনি লকডাউনের চেয়েও অপ্রয়োজনীয় এবং সৌখিন সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান অণুজীব বিজ্ঞানী ড. শোয়েব সাঈদ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের লকডাউনের চেয়েও স্বাস্থ্যবিধি মানার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। মাস্ক না পরে কেউ বের হবে না এটা নিশ্চিত করা গেলেই করোনার সংক্রমণের গতিকে ধীর করে দেয়া যায়।
তিনি জাপানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে স্টেডিয়ামে হাজার হাজার মানুষ খেলা দেখছে। কিন্তু প্রত্যেকেই মাস্ক পরে আছে। ফলে বিশাল সমাগমেও কোভিড ছড়াতে পারেনি।
ড. শোয়েব সাইদ বলেন, লকডাউনে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দুর্বিপাকে পরে যায়। পেটে ক্ষুধা থাকলে কেউই ঘরে বসে থাকার আগ্রহ পায় না। কাজেই লকডাউনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা সেটির দিকে সরকারের কঠোর হওয়া উচিৎ।
কানাডিয়ান অণুজীব বিজ্ঞানী নিবেদিতা বিশ্বাস মনে করেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করাই কোভিড থেকে রেহাই পাওয়ার মোক্ষম দাওয়াই।
তিনি বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় লকডাউন দিয়ে সেগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারেনি। তার চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে সেগুলো অনুসরণে গুরুত্ব দেয়া গেলে ভিন্ন ফল পাওয়া যেতো বলে আমরা ধারণা করি।
নিবেদিতা বিশ্বাস আরও বলেন, ভ্যাকসিন কোভিডের সংক্রমণ এবং তার কারণে মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুরোধে কাজ করছে। বিজ্ঞানসম্মত নয় এমন গুজবের কারণে ভ্যাকসিনকে উপেক্ষা করার মানেই হচ্ছে নিজের জীবনকে বিপন্ন করা।
নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, মহামারির সময় এর থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনাই গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ। মানুষকে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি মিডিয়া এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে সক্রিয় করা দরকার।
তিনি ভারতের সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এখনি সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।
জেডএইচ/এমকেএইচ