নূপুর

আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ০২:২৮ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
ছবি-সংগৃহীত

এখনকার মেয়েরা নূপুর পরে ঠিকই কিন্তু শব্দ হয় না।
কারণ নূপুরের শব্দ হয় যে ঘুঙুর দিয়ে, সেটা তারা খুলে রেখে পরে!

রুমকি আমাদের এখানেই থাকে, বয়সে আমার চেয়ে দু বছরের ছোট। এক সিনিয়র ভাই ভাবির বাসার ইফতারের দাওয়াতে রুমকির সঙ্গে দেখা, আমাকে একটা ভেতরের দিকের ঘরের কর্নারে নিয়ে গিয়ে বললো আপু বসেন, কথা আছে আপনার সঙ্গে, দেখেন তো কাজটা কেমন হলো?

একদিন খুবই কৌশলে আমি আমার জামাই শিহাবের মোবাইলের পাসওয়ার্ড টেরা চোখে স্ক্যান করে ফেলছি,
এদিকে আবার দুইস্তর নিরাপত্তা বিশিষ্ট টাচ স্ক্রিন মোবাইল!
কি যে করি...

তো একদিন সে ঘুমিয়ে গেলে তার আঙুল দিয়ে টাচ করে মোবাইল আনলক করে ফেললাম। এরপর অতি উত্তেজনায় ফেসবুক দেখবো নাকি মেসেঞ্জার নাকি ভাইবার বা হোয়াটস্যাপ বা ইমেইল ইনবক্স বুঝে উঠতে পারছি না। অবশেষে সময় নষ্ট না করে সবার আগে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম, তো যাদের নাম দেখি সবাই তো পরিচিত...অপরিচিত কোনো মেয়ের নাম খুঁজে পেলাম না। আবার এদিকে টেনশন, জামাই না জানি কখন উঠে যায়...

এরপর আমি ভাইবারে ঢুকেছি... চোখ বুলাতে গিয়ে দেখে হোয়াটসঅ্যাপে নতুন মেসেজের শব্দ! তাড়াতাড়ি নাম আর মেসেজ দেখে আবার মেসেঞ্জারে নিজের নাম ক্লিক করে, কোথায় তুমি? লিখে মেসেজ সেন্ড করলাম, শেষে মোবাইলটা জামাইয়ের কাছে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে রিমোট হাতে নিয়ে টিভির সামনে বসে গেলাম। কিন্তু ইমেইলের ইনবক্সটা দেখা হলো না, মনের মধ্যে খচখচানিটা থেকে গেলো...

কিছুক্ষণ পর শিহাব আমাকে ডাকলো, তুমি কোথায়?

আমি উত্তর দিলাম, কেন কি হয়েছে?

তুমি ঘুমাও নাই? এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও, গলাটা শুকায় কাঠ গেছে।

আমি তখন আমার ফোন থেকে শিহাবকে ফোন করলাম, সে ফোন ধরলে বললাম তোমার জ্বালায় তো একটা মুভিও দেখা যায় না দেখছি, একটা কমেডি মুভি দেখছিলাম, খুবই হাসির, দেখলে উঠে আসো... পানি রান্নাঘরে।

সে নিশ্চিন্তে তুমি দেখো বলে আবার ঘুমিয়ে গেলেন।

আপু পরদিন ছুটির সকালে শিহাবকে বললাম, তোমার তো ভালোই বুদ্ধি হয়েছে দেখলাম, আমাকে টেক্সট করে তারপর ঘুমের ভান করে কার সঙ্গে হোয়াটস্যাপে গল্প করো রাতের বেলা? এত কথা বলছো যে গলা শুকিয়ে পানির পিপাসা পেয়ে গেছে।

শিহাব অবাক হয়ে বললো, আমি আবার কখন কার সঙ্গে গল্প করলাম?

আবারও মিথ্যা বলো, আমি মুভি দেখতে দেখতে দেখলাম তুমি আমাকে তুমি কোথায়? লিখে টেক্সট করছো, তার ২০ সেকেন্ডের মাথায় তোমার ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ফোন আসার রিংয়ের শব্দ পেলাম! মাঝরাতে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কে ফোন দেয়, দেখি তোমার মোবাইল?

কথা তো বলছোই আবার কনফার্ম হওয়ার জন্য আমাকে ডাকলে, আমি কোথায়? তুমি কি মনে করছো আমার বয়স এখনো ২৩? বাড়েনি? আমি কিছু বুঝি না?

বেচারা কাচুমাচু মুখে বললো, আমি কখন তোমাকে টেক্সট করলাম, কেইবা ফোন করলো আমাকে? আমি তো আসলেই ঘুমাচ্ছিলাম!

ফের মিথ্যা কথা! এই দেখো আমার মোবাইলে রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে তোমার টেক্সট!

জামাই বেচারা অবাক চোখে তার মোবাইল ঘেটে দেখে আসলেই তার বৌকে টেক্সট করা হয়েছে এবং তার একটু আগেই হোয়াটসঅ্যাপে শাহীন বাংলাদেশ থেকে টেক্সট করেছে,
লিখেছে, ‘ঘুমাও নাই? ফোন দেই? কথা আছে...’
বলে ফোনও দিয়েছে একটু পর,
শাহীন তার ছোটবেলার বন্ধু!
কিন্তু সে তো তার বৌকে টেক্সট করেনি, শাহীনকেও রিপ্লাই দেয়নি।

কই দাও, তোমার ফোন দাও দেখি, স্বপ্নের ভেতরকে তোমাকে ফোন দেয়...
আর শাহীন কে? আগে বলো এই বন্ধু ছেলে না মেয়ে?
আমি একটু দূরে গেলেই ফোনে কথা শুরু হয়, কে শুনি?

জামাই বেচারা ভাবছে কি বলবে,
বললেন মোবাইলের মনে হয় আত্মা ডেভেলপড করছে, নিজে নিজেই টেক্সট পাঠায়, মেসেজ সিন করে, রিপ্লাই দেয়!
আর শাহীন আমার গেদা কালের বন্ধু, হয়তো কিছু বলতে চেয়েছিলো...

তো সেই দাওয়াতে রুমকি হাসতে হাসতে আমাকে বললো এই ঘটনা, দেখছেন আপু কীভাবে টাইট দিয়েছি জামাইকে? আমাকে কয়দিন আগে একজোড়া শব্দওয়ালা এক জোড়া নূপুর কিনে দিয়েছে, বলে বাড়িময় তুমি নূপুর পরে হাঁটবে আর সুন্দর ঝুনুর ঝুনুর শব্দ হবে, ভাবতেই ভালো লাগছে। যাও নূপুর জোড়া পরে এক কাপ চা বানিয়ে আনো। আমার ঠিক তখনই সন্দেহ হয়েছিল, ব্যাটার মতলব ভালো না।

আচ্ছা আপু শিহাব আমাকে হঠাৎ নূপুর কিনে দিলো কেন?
কিছুই তো খুঁজে পেলাম না...

আমি হতভম্ব হয়ে রুমকির দিকে তাকিয়ে আছি...
শিক্ষার কোনো বয়স নেই!
জীবনের কতকিছু যে জানার বাকি....

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]