মিশরে জাতীয় শোক দিবস পালন

পিরামিড আর নীলনদের দেশ মিশরে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শোক দিবসের কর্মসূচি সূচিত হয়। রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং প্রবাসীদের নিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন।
সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তিলোওয়াতের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা শুরু হয়। এই পর্বের শুরুতে রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুসহ শহীদদের পবিত্র স্মৃতির সম্মানে ও স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মিশরে অধ্যয়নরত ছাত্র, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। পরে ‘বাঙালির কালোরাত’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা দর্শক শ্রোতাদের মন বেদনা-ভারাক্রান্ত করে তোলে। বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত কবিতা ও শোক গাঁথার মাধ্যমে শোক দিবসের করুণ স্মৃতি বাগ্মময় হয়ে উঠে।
আলোচনা সভায় আগত অতিথিদের মধ্য থেকে অনেকে স্বত:স্ফুর্তভাবে বক্তব্য দেন। বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন এবং তার অবিস্মরণীয় অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুদীর্ঘকাল জেল-নির্যাতন ভোগ করে অশেষ ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। সেই রক্ত গর্বিত দেশের সুযোগ্য নাগরিক হিসাবে আমরা আজ বিদেশের মাটিতে সগৌরবে অবস্থান করছি।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাস তথা বিশ্বের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এক কলঙ্কিত অধ্যায় কিন্তু সেই শোকাবহ ইতিহাস থেকে আমরা দেশপ্রেম ও দেশসেবার সূদৃঢ় শপথ গ্রহণ করব। জন্মভূমির প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য যেন ভুলে না যাই, সেজন্যই বঙ্গবন্ধুর জীবন-সংগ্রাম বারবার স্মরণ করতে হবে, আমাদের দীক্ষা নবায়ন করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সকল প্রবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটি আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে যার যার সাধ্যমত অবদান রাখার আহ্বান জানান।
শোকবিঁধুর এই দিনে বঙ্গবন্ধুর জীবন সাধনা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের মহিমাকে স্মরণ ও সম্মানের নিদর্শনস্বরূপ স্মরণিকা হিসাবে মিশর প্রবাসী শিক্ষার্থীদের একক ঐক্যবদ্ধ সংগঠন ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’ এর সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়, যারা প্রবাসীদের সেবায় নিরন্তর স্বেচ্ছামূলক শ্রম দান করেছেন।
বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শাহাদাত বরণকারী শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
এমআরএম/জিকেএস