ইসলামে নারীর অধিকার


প্রকাশিত: ০৩:৫৩ এএম, ০৮ মার্চ ২০১৭

আজ (৮ মার্চ) বিশ্ব নারী দিবস। ‘নারী-পুরুষ সমতায়, উন্নয়নের যাত্রা; বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা’-স্লোগানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে দিনটি।

ফিরে দেখা
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং বৈরি পরিবেশমুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে আমেরিকার নিউইয়র্কের একটি সুতা কারখানার একদল সাহসী নারী এ প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। ওই সময় আন্দোলনকারী নারীদের ওপর চলে চরম নির্যাতন ও গ্রেফতার।

তিন বছর পর ১৮৬০ সালে গঠন করা হয় নারী শ্রমিক ইউনিয়ন। দীর্ঘ দিনের দাবি ও নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর ১৯০৮ সালে পোশাক ও শিল্প কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন।

১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে অবশেষে ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘও এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। আর ১৯৭৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

ইসলামে নারীর অধিকার
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে সমান মর্যাদার মানুষ ঘোষণা দিয়েছেন। যে সময়ে মানুষ নারীকে মানবাত্মা হিসেবেই বিশ্বাস করতো না।  আল্লাহ বলেন-
‘হে মানবজাতি! ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে, যিনি তোমাদেরকে (নারী-পুরুষ) একটি মাত্র আত্মা থেকে সৃষ্ঠি করেছেন। (সুরা নিসা : আয়াত ১)

পুরুষরা যেন নারীকে হেয় বা ছোট করতে না পারে, সে জন্য আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় ঘোষণা করেন, ‘হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্ঠি করেছি এবং বিভক্ত করেছি তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে পরিচয় করতে পার।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যখন নারীর সব মর্যাদা ও অধিকার চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। সে সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর নাজিল নারী অধিকারের বিষয়ে ঐশী বাণী- ‘নারীদেরও রয়েছে অধিকার পুরুষের ওপর; যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে নারীদের ওপর।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২২৮)

নারীদের মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এক সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! খেদমত পাওয়ার অধিকার বেশি কার? প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের। এভাবে লোকটি প্রশ্নটি তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন। তিনিও মায়ের খেদমত করার কথা বললেন। লোকটি যখন চতুর্থবার খেদমতের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন বিশ্বনবী বললেন, তোমার বাবার।

পরিশেষে...
ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বড় অপবাদ দেয়া হয় যে, ইসলাম নারীর মর্যাদা দেয়নি৷ অমুসলিমদের সাথে সাথে আজকাল কিছু অতি মডার্ন মুসলমানরাও এই শ্লোগান দেন। কুরআন ও হাদিসের তথ্য মতে ইসলাম নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেনি’- এটি একটি বড় মিথ্যাচার।

মুসলিম উম্মাহর উচিত নারীর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলামের সঠিক দিক-নির্দেশনাগুলো বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের নিকট তুলে ধরা। নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা। কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রের আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় সহাবস্থান তৈরি করা।

সর্বোপরি নারীদের মহামূল্যবান সম্পদ ইজ্জত-আব্রু, মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআন ও সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে সরকার, সমাজ ও স্বেছাসেবী প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা ঈমানি দায়িত্ব।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো সমগ্র দুনিয়ার মানুষের সামনে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।