যানবাহনের ৮০ শতাংশ সিলিন্ডারের পুনঃপরীক্ষা হয় না


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সারা দেশে সোয়া দুই লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর রিটেস্টের বিধান রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মাত্র ২০ শতাংশ যানবাহন তা করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যানবাহনে ব্যবহৃত সিলিন্ডারসহ সব ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টের অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক অধিদফতর। তারপর সরকারের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) সিএনজি কনভারশন ও রিটেস্টিং করে। এছাড়া নাভানাসহ চার-পাঁচটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রিটেস্ট করে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদফতর জানিয়েছে, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর গাড়িতে লাগানো গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয় মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার যানবাহন। বাকি যানবাহনের পরীক্ষা বা সিলিন্ডারের মেয়াদ রয়েছে কি না তা জানা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে এ ব্যাপারে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ভয়াবহ তাজা বোমার মতো কাজ করে। আইন করে বিআরটিএ’র ফিটনেস নেয়ার সময় সিলিন্ডার রিটেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা হলে বহুলাংশেই ঝুঁকি কমবে। সচেতন হবেন সবাই, এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা। সরকারের উচিত শিগগিরই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ২৪ লাখ ৯১ হাজার ২১৯টি।

তার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ৪ হাজার ২৯২টি, বাস ৩৬ হাজার ২৬৮, কার্গোভ্যান ৬ হাজার ১৭, কাভার্ড ভ্যান ১৭ হাজার ১২৯, হিউম্যান হলার ১০ হাজার ৪৬৯, প্রাইভেটকার ৪৩ হাজার ১৫৫, মাইক্রোবাস ৮৬ হাজার ৪১, মিনিবাস ২৬ হাজার ৯২৫, প্রাইভেটকার (ভাড়ায় চালিত) ২৯ হাজার ৬৪, অটোরিকশা ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৯২, ট্যাক্সিক্যাব ৪৫ হাজার ১৪১ ও ট্রাক ১ লাখ ১৪ হাজার ৪১৪টি।

এসব যানবাহনের বড় একটি অংশ সিএনজিচালিত। এর মধ্যে ঠিক কী পরিমাণ যানবাহন সিএনজিচালিত তার সঠিক পরিসংখ্যান বিআরটিএ বা সরকারি কোনো দফতরেও নেই। কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তরের পর সঠিকভাবে রিপোর্ট জমা দেয় না।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো শক্ত পদক্ষেপ নিলে আমরা সহযোগিতা করব।

janbahon

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ৩৩টি এলপিজি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নিয়েই এসব লাইসেন্স দেয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। ব্যবহারকারীরা মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন কি না তা দেখার দায়িত্ব তো সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরই।

আরপিজিসিএলের সিএনজি কনভারশন ও টেস্টিং বিভাগের ম্যানেজার (ওয়ার্কশপ) প্রকৌশলী শুভ বড়ুয়া বলেন, আমাদের নিজস্ব দুটি রিটেস্টিং সেন্টার রয়েছে। একটি ধোলাইপাড়ে। আরেকটি জোয়ার সাহারা খিলক্ষেতে। সারা বছরই রিটেস্টিং চলে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিস্ফোরক অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক সামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছর গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার সময় গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দুই বছর আগে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ কি না তা পরীক্ষা করে। তবে সারাদেশে ৫৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে রিটেস্টিং সেন্টার আছে মাত্র ১৪টি।

মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার রোধে আইন করার দাবি জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, বিআরটিএ যখন যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করে তখনই যদি নিজস্ব অথবা যৌথ উদ্যোগে সিলিন্ডারও রিটেস্ট করতে পারে তাহলে কমে আসবে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এজন্য প্রয়োজনে আইনও করা যেতে পারে।

জেইউ/এমএমজেড/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।