একটা সময়ে ক্লান্তি চলে আসে, মুশফিকের সেটা হয়নি: বাশার
মুশফিকুর রহিমের সমসাময়িক বা তার আগে-পরে অনেক ক্রিকেটারই খেলেছেন। কেউই ১০০ টেস্টের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি। নিকট ভবিষ্যতে কারো পারার সম্ভাবনাও নেই। কারণ, বর্তমানে টেস্ট খেলতে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বাধিক ৭৩ ম্যাচ খেলেছেন মুমিনুল হক। মেহেদী হাসান মিরাজের টেস্ট সংখ্যা ৫৪। লিটন দাস খেলেছেন ৫০ টেস্ট।
মুশফিক ৯৯ টেস্ট খেলে শততম টেস্ট খেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। ১৯ নভেম্বর শেরে বাংলায় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে মাঠে তার শততম টেস্ট পূর্ণ হবে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এ অসামান্য কৃতিত্বের অধিকারী হবেন মুশফিক।
বিভিন্ন সময়ে টেস্ট খেলা ক্রিকেটারের সংখ্যা হয়তো হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৩ জন শুধু ১০০ টেস্ট খেলতে পেরেছেন। মুশফিক হবেন ১০০ টেস্ট খেলা ৮৪ নম্বর ক্রিকেটার।
এটা কী করে সম্ভব হলো? মুশফিকের মাঝে কী এমন বিশেষ গুণ আছে, যা দিয়ে সে ১০০ টেস্ট খেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে; যা পারল না আর কেউ?
অধিনায়ক ও নির্বাচক হিসেবে মুশফিককে দেখার আলোকে সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে বাশার বলেন, ‘মুশফিক হলো 'মিস্টার ক্রিকেট'। ১০০ টেস্ট খেলা কিন্তু সোজা কথা নয়। অনেক কঠিন। অনেক স্যাক্রিফাইস থাকে। অনেক ডেডিকেশন লাগে। অনেক প্যাশন লাগে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে প্যাশন কমে যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার পূর্বশর্ত অতি অবশ্যই স্কিল, ট্যালেন্ট। সেই সাথে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। একটা সময় সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আর ইচ্ছে করে না। মন চায় না।’
‘সবাই বলে বয়স হয়েছে। সেই বয়স হওয়ার প্রকাশটা আসলে ঘটে মনে। সবাই মনে করেন শরীরে। কিন্তু আমি বলবো মনে। আসলে মনেই প্রথম জানান দেয় যে আমার বোধহয় বয়স হয়েছে। তখনই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ইচ্ছেটা কমে যায়। চোখ আর শরীর স্লো হয়ে যায়। একটা সময় আসে, মনটা আর চ্যালেঞ্জ নিতে চায় না। একটু বিশ্রাম চায়। আমারও শেষের দিকে মনে হয়েছে ড্রেসিংরুম থেকে হসপিটালিটি বক্সে বসে খেলা দেখতে ইচ্ছে করতো। ওখানে খুব আরাম। মনে হতো ওখানে বসে বসে কফি খেতে খেতে খেলা দেখি।’
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক যোগ করেন, ‘যেদিন থেকে আপনি খেলা শুরু করবেন, তারপর যত সময় গড়াবে, একটা সময় ক্লান্তি চলে আসবে। একটা নির্দিষ্ট সময় এসে আর অনেকে এনজয় করে না। আর তখনই দেখবেন অনেকে ফর্মে থাকতেও খেলা ছেড়ে দেয়। কারণ তখন আর তার খেলাটা ভালো লাগে না। উপভোগ্য মনে হয় না। কিন্তু মুশফিকের মধ্যে এখনো সেই ক্লান্তি আসেনি। সে এখনো ক্রিকেট অনেক উপভোগ করে। ক্রিকেট তার কাছে এখনো সেই আগের মতই আনন্দের, উপভোগের। পাশাপাশি কেউ কেউ হয়তো বাড়তি পরিশ্রমের কথা বলবেন। প্র্যাকটিসে বেশি সময় কাটায়, ঘাম ঝরায়। তা করে। তবে সেটা আরও অনেকেই করে। কিন্তু আসল কথা হলো, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর একটা বয়সে গিয়ে মন থেকে খেলাটা উপভোগ করে না অনেকেই। কিন্তু মুশফিক ঠিক এখনো ক্রিকেটটা উপভোগ করে, আনন্দ পায়। তাই তার কোনো ক্লান্তি আসেনি।’
মুশফিককে কিংবদন্তি আখ্যা দিয়ে বাশার বলেন, ‘১০০ টেস্ট খেলা সবাই কিংবদন্তি। মুশফিকও কিংবদন্তি। আমাদের তামিম, সাকিব, মুশফিক-সবাই লিজেন্ড। কে এক, কে দুই বা কে তিন, আমি তা বলতে চাই না। প্রত্যেকেই লিজেন্ড। তারা সবাই ভালো। মুশফিক খুব বেশি প্রতিভাবান। ট্যালেন্ট, স্কিল না থাকলে শুধু পরিশ্রম দিয়ে ১০০ টেস্ট খেলা যায় না। হি ইজ এ টপ ক্রিকেটার।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস