এ জয় তরুণদের, এ জয় আগামীর বাংলাদেশের
হোক তা ঘরের মাঠে অনুকুল পিচে, তারপরও টম ল্যাথাম, ডেভিড কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, হেনরি নিকোলস, ড্যারেল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস, কাইল জেমিসন, ইশ সোধি, অ্যাজাজ প্যাটেল এবং টিম সাউদিদের নিয়ে গড়া নিউজিল্যান্ডকে হারানো, তাও দেড়শো রানের ব্যবধানে- চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।
অনেক কারণেই নাজমুল হোসেন শান্তর এ দলটির কৃতিত্ব অনেক বড়। এ সাফল্যকে হেলাফেলার কোনই সুযোগ নেই।
অধিনায়ক শান্ত প্রথম ইনিংসে বেশি হাত খুলে খেলতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে নিজেই এক সম্ভাবনাময় ইনিংসের যবনিকা টানলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ও খেলার আবস্থা বুঝে ধৈর্য্য ধরে শতক উপহার দিয়ে দলকে সামনে এগিয়ে দিয়েছেন।
এক কথায় শান্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ সাফল্যের মিশনে। বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম স্পিন ভেলকিতে পর্যুদস্ত করেছেন কিউইদের। প্রথম ইনিংসে ৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করা তাইজুল ১৩৫ রানে ১০ উইকেট দখল করে হয়েছেন ম্যাচ সেরা।
কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয় ( প্রথম ইনিংসে (৮৬), মুমিনুল হক (৩৭ ও ৪০), মুশফিকুর রহিম (দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭), মেহেদি হাসান মিরাজ (দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০ নটআউট ও ২ উইকেট), নাইম হাসান (৩ উইকেট) ও শরিফুলের (২ উইকেট) অবদানকে অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই।
সব মিলিয়ে এটা পরিপূর্ণ টিম পারফরমেন্স। খালি চোখে অধিনায়ক শান্ত আর বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুলের নৈপূণ্যটা বেশি চোখে পড়লেও বাকিরা ঠিক সহায়ক ভূমিকা নিয়েছেন। তারই ফলশ্রুতিতে এ অবিস্মরণীয় জয়।
আগেই জানা, সাকিব ও তামিমরা নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ৮ উইকেটে জয়ের টেস্টেও ছিলেন না। সিলেটের সাফল্যে মোড়ানো টেস্টেও ছিলেন এই দুই শীর্ষ তারকা।
কিন্তু টেস্টে মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের নির্ভরযোগ্য পারফরমার লিটন দাস আর দুই ফ্রন্টলাইন পেসার তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন ঠিকই ছিলেন ২০২২-এর জানুয়ারির সেই টেস্টে। শুধু খেলেননি, তাদের অবদানও ছিল প্রচুর।
সবার জানা, এবাদত হোসেন দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিলেন। ২১ ওভার বল করে ৬ মেডেনসহ মাত্র ৪৬ রানে ৬ কিউই ব্যাটারকে আউট করেন ফাস্ট বোলার এবাদত।
এবাদতের বারুদে বোলিংয়ে নিজেদের মাটিতে মাত্র ১৬৯ রানে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে নিউজিল্যান্ড। আর তাতেই জয়ের দরজা খুলে যায় বাংলাদেশের সামনে। জিততে লক্ষ্য দাঁড়ায় মোটে ৪০। বাংলাদেশ ২ উইকেট খুইয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
কাজেই এবাদতের ঐ বিধ্বংসী স্পেলটাকেই ভাবা হয় কিউই বধের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। সঙ্গে লিটন দাস আর তাসকিনের ভূমিকাও কিন্তু কম ছিল না।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে কার্যকর ভূমিকা ছিল লিটন দাসের। ওই টেস্টের অধিনায়ক মুমিনুল হকের (৮৮) পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৬ রান (চার ঘণ্টা ৭ মিনিটে ১৭৭ বলে ১০ বাউন্ডারিতে) আসে লিটনের ব্যাট থেকে।
আর প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য তাসকিন দ্বিতীয়বার বল হাতে নিয়ে কিউই ক্যাপ্টেন ও ওপেনার টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্রেক থ্রু উপহার দেয়ার পাশাপাশি ৩৬ রানে ৩ উইকেটর পতন ঘটান। মোট কথা, মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ে প্রায় অর্ধেক অবদান ছিল লিটন, এবাদত আর তাসকিনের।
এবার সিলেট টেস্টে তারাও ছিলেন না। কাজেই এক কথায় মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চেয়ে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কম শক্তি নিয়ে সিলেটে এ টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ।
যে দলে মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ আর তাইজুল ছাড়া আর কেউ তেমন বেশি টেস্ট খেলেননি। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (২৩) অল্প কিছু টেস্ট খেলে ফেলেছেন।
ম্যাচ সংখ্যার আলোকে বাকি ৬ জন একদমই নবিশ। মিডল অর্ডার শাহাদাত হোসেন দিপুর টেস্ট অভিষেক হলো। এছাড়া দুই ওপেনার জাকির হাসান (৩), মাহমুদুল হাসান জয় (৯), অধিনায়ক নাইম হাসান (৮) ও শরিফুল (৭) আর নুরুল হাসান সোহানসহ (৯) বাকি ৬ জনের সবাই অল্প কিছু ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সিলেটে খেলতে নেমেছিলেন।
সেরকম এক তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে দুই ইনিংসে ৩০০ প্লাস রান (৩১০ ও ৩৩৮) করা এবং প্রথম ইনিংসে ৭ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ১৫০ রানের বড় জয় পাওয়া অনেক বড় কৃতিত্ব। এটা অবশ্যই তরুণদের জয়। আগামী দিনের বাংলাদেশের সাফল্য। এ কৃতিত্ব, অর্জন আর সাফল্যকে এতটুকু খাট করে দেখার কোনই উপায় নেই।
এআরবি/আইএইচএস