‘অনেকে আমাকে আফ্রিকান মনে করে, খেলার সময় ইংরেজিতে কথা বলি’

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের ফুটবলার ছানোয়ার হোসেনকে দেখলে আপনিও আফ্রিকান ভেবে ভুল করবেন। যে ভুলটা অনেকেই করেন। কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও।
টাঙ্গাইলের সখীপুরের ১৮ বছরের এই যুবক নিজের ‘বিদেশি খেলোয়াড়’ পরিচয়টা ভালোই উপভোগ করেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন জায়গায় বিদেশির মতো আচরণ করেন। অল্প-স্বল্প ইংরেজি বলেন। বিদেশি খেলোয়াড় পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খেপও খেলেন।
দেশি হয়েও বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ছানোয়ারের আছে নানা মজার অভিজ্ঞতা। মাঝে মধ্যে বিদেশি মনে করে ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে তাকে। মজার সব গল্প নিয়ে কথা বলেছেন ছানোয়ার হোসেন।
জাগো নিউজ: দেশি হলেও অনেকেই আপনাকে বিদেশি ভেবে ভুল করেন। বিষয়টিকে কীভাবে উপভোগ করেন?
ছানোয়ার হোসেন : অনেকের কাছে বিদেশি শব্দটি শুনতে শুনতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন আমি এটাকে বেশ উপভোগ করি।
জাগো নিউজ: আপনি বিদেশি হিসেবে গ্রাম-গঞ্জে খেপ খেলতে চান। সেটা করেন কেন?
ছানোয়ার হোসেন: দেশি হিসেবে খেললে ম্যাচপ্রতি পাওয়া যায় ৫ হাজার টাকার মতো। আর বিদেশিরা পান ২-৩ হাজার টাকা বেশি। তাই আমি ওই সুবিধাটা নেই।
জাগো নিউজ: কথা-বার্তায় বুঝে ফেলে না আপনি বিদেশি না, দেশি?
ছানোয়ার হোসেন: আমি তো খেলার সময় ইংরেজিতে কথা বলি। এই যেমন- গিভ মি বল, গো.. গো..। বুঝতে পারে না যে আমি দেশি।
জাগো নিউজ: ঢাকার বাইরে খেলতে গেলে আর কি উপভোগ করেন?
ছানোয়ার হোসেন: যেখানেই খেলতে যাই সবাই বলে ‘এই যে ফরেনার এসেছে।’ অনেকে এসে আমার সঙ্গে ছবি তোলে। ইংরেজিতে জানতে চান কেমন আছি। আমি ইংরেজিতেই উত্তর দেই।
জাগো নিউজ: আপনি তো বয়সভিত্তিক বেশ কয়েকটি জাতীয় দলে খেলেছেন। এসব জায়গায় কখনো সমস্যা হয়নি?
ছানোয়ার হোসেন: অবশ্যই হয়েছে। আমি এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ খেলতে কাতার গিয়েছিলাম ২০১৭ সালে। তখন এএফসির কর্মকর্তারা আমাকে প্রথমে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। পরে আমাকে পাসপোর্ট দেখিয়ে খেলতে হয়েছিল।
জাগো নিউজ: খেলা বা খেলার মাঠ ছাড়া সাধারণভাবে চলাফেরার সময় মজার কোন ঘটনা আছে?
ছানোয়ার হোসেন: আছে। আমি মুগদা এলাকায় থাকি। ওখানে একবার চায়ের দোকানে এক চাচা আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হয়্যার ইউ আর ফ্রম? উত্তরে বলেছিলাম- আমি বাংলাদেশি। হাঁটাচলার সময়ও অনেকে প্রশ্ন করে হয়, হাউ আর ইউ? আমি অনেক সময় বাংলায় জবাব দেই, অনেক সময় ইংরেজিতে।
জাগো নিউজ: আরও কোন বিড়ম্বনায় পড়ার অভিজ্ঞতা আছে?
ছানোয়ার হোসেন: একদিন আমি বাসাবোর কদমতলা থেকে রিকশায় ক্যাম্পে ফিরছিলাম। পুলিশ আমার রিকশা থামিয়ে পাসপোর্ট দেখতে চান। পকেটে থাকা বিকেএসপির কার্ড দেখালে আমাকে ছেড়ে দেয়।
জাগো নিউজ: বিদেশির অভিনয় করে সুবিধা নেন। কোনো অসুবিধায় পড়েছেন খেলার সময়?
ছানোয়ার হোসেন: মাঝে মাঝে হয়। বিদেশি মনে করে স্থানীয়রা বল পাস দিতে চায় না। বলি গিভ মি বল। দেয় না। তখন বাংলায় বলি, আমাকে বল দাও। যখন বুঝতে পারে আমি বাংলাদেশি, তখন পাস দেয়।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
ছানোয়ার হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/