চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর

ফুটবলারদের নিয়ে টানাটানি, মোহামেডান কি পারবে ধরে রাখতে?

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ০১ জুন ২০২৩

একটি ট্রফি বদলে দিয়েছে মোহামেডানকে। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ ফুটবলের এবং ৯ বছর পর ঘরোয়া ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন সাদা-কালোরাই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ক্রীড়াঙ্গনে। দীর্ঘদিন ট্রফিখরায় ভুগতে থাকা দলটি এবার ফেডারেশন কাপ বাজিমাত করেছে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে। মোহামেডান শিবিরে চলছে উৎসব।

ক্লাব কর্তৃপক্ষের ঘোষণা ছিল চ্যাম্পিয়ন হলে অর্ধকোটি টাকা বোনাস দেওয়া হবে ফুটবল দলকে। বাস্তবে খেলোয়াড়দের সেই প্রাপ্তিটা হয়েছে বেশি। ৩২ ফুটবলার ও ৮ কোচিং স্টাফককে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা করে।

ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে হ্যাটট্রিক (চার গোল) করে ইতিহাস গড়া মালির ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবাতে পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত বোনাস। দুই লাখ টাকা করে অতিরিক্ত বোনাস পেয়েছেন দুই গোলরক্ষক মো. সুজন ও আহসান হাবিব বিপু। আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় প্রতিশ্রুত সেই বোনাস পেয়ে গেছেন খেলোয়াড়রা।

মোহামেডানের এবারের দলটি তারুণ্যনির্ভর। বেশ কয়েক মৌসুম ধরে মোহামেডানের দলটি তারুণ্যনির্ভরই হয়ে আসছে। ক্লাব কোন ফলাফল করতে না পারলেও মাঠে পারফরম্যান্স দেখানো তরুণ ফুটবলাররা প্রতি মৌমুমেই দল ছেড়ে গেছেন বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে।

ফেডারেশন কাপ শেষ হওয়ার পর এখন বাকি আছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চার রাউন্ড। ২২ জুলাই লিগের শেষ ম্যাচ দিয়ে এবারের মৌসুমের পর্দা নামার কথা।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও খেলা বাকি থাকতে ফুটবলাররা পরের মৌসুমের জন্য ঠিকানা খুঁজতে শুরু করেছেন। ক্লাবগুলো লিগের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর পর থেকেই নতুন মৌসুমের জন্য পছন্দের খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে অনেক ফুটবলার ঠিক করে ফেলেছেন পরের মৌসুমে তারা কোথায় খেলবেন।

মোহামেডানের একটা ধারা চলে আসছে তারা দলবদলের মাঠে নামে সবার পরে। টানা কয়েকটি মৌসুমে তারা যে কারণে টাকার সংকুলান করেও খেলোয়াড় পাননি। গত দলবদলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় মোহামেডানের কাছ থেকে অগ্রীম নিয়েও পরে নাম লিখিয়েছেন অন্য ক্লাবে।

এবার কী হবে? তিনদিন আগেই মোহামেডানের যে খেলোয়াড়দের চাহিদা আহামরি ছিল না, রাতারাতি তারা চলে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই অন্য ক্লাব কর্মকর্তাদের কাছে কদর বেড়েছে মোহামেডানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের। তাদেরকে এখন ধরে রাখাই হবে মোহামেডানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করানোর নায়ক কোচ আলফাজ আহমেদ আনন্দের পাশাপাশি চিন্তিতও। ‘ক্লাব থেকে আমাকে বলা হচ্ছে খেলোয়াড় যারা আছেন তারা সবাই থাকবেন। কিন্তু আমি ভয়ে আছি। কারণ, খেলোয়াড়দের বিভিন্ন ক্লাব থেকে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে ওদের কদর বেড়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর। এক কথায় কদর দ্বিগুণ। গত মৌসুমে যাকে ২০ লাখে নেওয়া গেছে তাকে এবার ওই টাকায় রাখা যাবে না’-বলেছেন আলফাজ।

আগামী মৌসুমের জন্য কেমন দল করতে চান? জবাবে ১৪ বছর পর মোহামেডানকে ফেডারেশন কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার করে দেওয়া কোচ বলেন, ‘দল কেমন করবে, সেটা ক্লাবের বিষয়। এ নিয়ে আমাকে এখনো কিছু বলা হয়নি। তবে আমি মনে করি, যারা আছেন তাদের মধ্যে যাদের প্রয়োজন তাদের ধরে রাখা দরকার। তারপর যেখানে যেখানে নতুন খেলোয়াড় দরকার সেখানে সেই গ্যাপ পূরণ করতে হবে।’

মোহামেডানের পরিচালক ও ফুটবল দলনেতা আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স বলেছেন, ‘এই দলের প্রয়োজনীয় সবাইকেই ধরে রাখা হবে। তারপর নতুন যোগ করবো। বিদেশিদের মধ্যে সোলেমান দিয়াবাতে থাকবেন। অনেক ক্লাবের চোখ আছে তার ওপর। কিন্তু আমরা আশাবাদী দিয়াবাতে মোহামেডানেই খেলবেন। অন্য বিদেশিদের মধ্যে মোজাফফরভ ছাড়া অন্য কাউকে নাও রাখা হতে পারে। আমাদের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আলমগীর ভাই (ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর) খেলোয়াড়দের বলে দিয়েছেন ‘তোমরা থাকবা। তোমাদের সব চাহিদা পূরণ করা হবে। কথা না বলে কোনো ক্লাবের সঙ্গে আলোচনা করবা না।’

এখন আর আশ্বাসে বেশি কাজ হয় না। বাংলাদেশের ফুটবলারদের বেশিরভাগেরই মনোভাব ‘যেখানে বেশি টাকা সেখানেই তারা’। খেলার সুযোগের চেয়ে টাকার অংকটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। তাই চ্যাম্পিয়ন দলটাকে মোহামেডান শেষ পর্যন্ত কতটা ধরে রাখতে পারবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।