কর্পোরেট আগ্রাসনে বিশ্ব ক্রিকেট


প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ১২ মার্চ ২০১৬

ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ফিরিঙ্গিদের এই খেলা আজ প্রবল জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন এক কর্পোরেট গোষ্ঠী ক্রিকেটকে মাঠ থেকে নিয়ে টেবিলের খেলায় পরিনত করছে। ছি: ছি: উঠেছে সব মহল থেকে। কর্পোরেট এই খেলা এতোই মারাত্মক মহামারী আকার ধারণ করেছে যে কোন কিছুতেই তা থামানো যাচ্ছে না।

বিশ্বায়নের এ যুগে সবকিছু যখন ওপেন কম্পিটিশন, ক্রিকেট তখন হাঁটছে ভিন্ন পথে। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী, বাংলাদেশ ক্রিকেটের একনিষ্ঠ ভক্ত আমি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড খেলা দেখার মুহূর্তে এক অনলাইন ওয়েবসাইটে কিছু মন্তব্য পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। নেদারল্যান্ডস-আয়ারল্যান্ডের জন্য দিনটি ছিল টুর্নামেন্টে টিকে থাকার দিন। বৃষ্টি শেষ চেষ্টাটাও করতে না দিল না।

আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি ২০১৬ ভাগ করা হয়েছে দুই ভাগে, কোয়ালিফাই রাউন্ড, প্রথম রাউন্ড ও সুপার ১০ রাউন্ড। প্রথম রাউন্ড কোয়ালিফাই ছাড়া কিছুই না। কোয়ালিফাই দিয়ে খেলতে আসা দলের আবার কোয়ালিফাই কেন?

netherlands

আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি২০ কয়ালিফাইয়ার ২০১৫ পয়েন্ট টেবিল

গ্রুপ

টিমের নাম

ম্যাচ

জয়

পরাজয়

টাই

পরিত্যাক্ত

রানরেট

পয়েন্ট

আইয়ারল্যান্ড

 

 

১.৩৫৬

হংকং

 

 

০.৬১৪

নামিবিয়া

 

 

০.৩১৪

পাপুয়া নিউগিনি

 

 

০.১১৩

যুক্তরাস্ট্র

 

 

-০.৩২১

জারছি

 

 

-০.৫২৩

নেপাল

 

 

-১.৪৯৯

 গ্রুপ বি

টিমের নাম

ম্যাচ

জয়

পরাজয়

টাই

পরিত্যাক্ত

রানরেট

পয়েন্ট

স্কটল্যান্ড

১.২০৫

নেদারল্যান্ড

১.১৫১

আফগানিস্থান

০.৬৯০

ওমান

০.৩৭৪

কেনিয়া

-০.৬৪৫

আরব আমিরাত

-১.৬৮৮

কানাডা

-১.২৯৫

আরেকটি প্রশ্ন, বাংলাদেশ আর জিম্বায়ুয়ে কেন প্রথম রাউন্ডে? উত্তর আমরা জানি, তারা আইসিসি র্যাংকিং এ প্রথম ৮ এ ছিল না। অবশ্য এই দুই দলকে খেলার সুযোগ ও তেমন দেয়া হয়নি। আমার জানামতে, টি২০ তে অস্ট্রেলিয়া, ভারত পাকিস্তান গত এক বছরে জিম্বাবুয়ে এর কাছে হেরেছে। আর বাংলাদেশের নাম শুনলে যে কোন ক্রিকেট দলের হাঁটুর কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়। বলে কয়ে যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এবার উত্তর, না না এ র্যাকিং তো গত তিন বছরের খেলার ফলের উপর।

বাংলাদেশের সাপোর্টার হওয়া সত্ত্বেও আয়ারল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডসের বিদায় আমাকে ব্যাথিত করেছে। দুটি দল কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলে এই পর্বে যোগ্যতা অর্জন করেছিল। আর পয়েন্ট টেবিলের হিসাবে তারা না খেলেই বিদায়। এটা বাংলাদেশের ভাগ্যেও হতে পারতো।

ক্রিকেট এখন তিন ফরম্যাটের খেলা। ৫ দিনের টেস্ট, ৫০ ওভারের ওয়ানডে ও ২০ ওভারের ধুম ধাড়াক্কা টি-টোয়েন্টি। টি-টোয়েন্টি খেলায় এসেছে প্রানচাঞ্চল্য, কমে এসেছে অস্ট্রেলিয়া বনাম নেপাল দলের। ২০১৬ যুব বিশ্বকাপ দেখে থাকলে একমত হবেন যে দল গুলোর মাঝে তেমন পার্থক্য নেই। অন্তত টি-টোয়েন্টিতে যে কোন দল জেতার ক্ষমতা রাখে।

প্রথম রাউন্ড গ্রুপ

টিমের নাম

ম্যাচ

জয়

পরাজয়

টাই

পরিত্যাক্ত

পয়েন্ট

দল

বিপক্ষ

বাংলাদেশ

১৫৩/২০.০

১৪৫/২০.০

ওমান

১৫৭/২০.০

১৫৪/২০.০

আইয়ারল্যান্ড

১৫৪/২০.০

১৫৭/২০.০

নেদারল্যান্ড

১৪৫/২০.০

১৫৩/২০.০

 প্রথম রাউন্ড গ্রুপ বি

টিমের নাম

ম্যাচ

জয়

পরাজয়

টাই

পরিত্যাক্ত

পয়েন্ট

দল

বিপক্ষ

আফগানিস্থান

২৮৯/৩৮.০

২৭২/৪০.০

জিম্বাবুয়ে

৩০৫/২০.০

২৮০/৪০.০

স্কটল্যান্ড

২৯২/৪০.০

৩১৭/৪০.০

হংকং

২৬০/৪০.০

২৭৭/৩৮.০

 গতদিন এক ভারতীয় ক্রিকেট বোদ্ধার সাথে কথা হল। আমি সে সময় বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারের সন্দেহজনক বোলিং নিয়ে কথা বলছিলাম। আমি সরাসরি বলছিলাম এটা ভারতের একটা চাল। উনি আমার কথায় কোন প্রতিবাদ করলেন না। শুধু বললেন, হয়ত সেদিন তারা চাক করেছেন। ফেসবুকের ছবি দেখানোর পর উনি বললেন, স্থির চিত্র দিয়ে বোঝাটা কঠিন। তবে এক জয়ের পর ওই বোলারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এর কারণ পরিষ্কার, তা হচ্ছে এটা মনস্তাত্তিক খেলা। এই অস্ত্র অস্ট্রেলিয়া অনেকের বিরুদ্ধে চালিয়েছে। আধুনিক স্পিন বোলিং এর কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন নিম্ন মানসিকতার এ খেলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েক বার।

 ভারতীয় ওই ক্রিকেট বোদ্ধা যা জানালেন তাতে ক্রিকেটের এই পথ নিয়ে সন্দিহান। ভারত কখনই অস্ট্রেলিয়া ভাল খেলেনি। টাকার কারণে অস্ট্রেলিয়া আজ ভারত উপযোগী পিচ বানায়। সন্দেহ জাগে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হয়ত অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি হাল্কাভাবে নিয়েছিল। তিনি স্বীকার করলেন ভারত অগ্রাসিত আইসিসির নীতিতে পরিবর্তন আনতে বর্তমান বিসিসিআই নতুন প্রধান পরিবর্তনের ডাক দিলেও তিনি কিছুই করতে পারছেন না। পুরো ক্রিকেটই কর্পোরেট নীতির শিকার।

ireland

সুপার রাউন্ডঃ

সুপার ১০ (গ্রুপ ১)

সুপার ১০ (গ্রুপ২)

ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিন আফ্রিকা

ভারত

স্রিলাঙ্কা

নিঊজিল্যান্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

পাকিস্থান

আফগানিস্থান / জিম্বাবুয়ে

বাংলাদেশ/ওমান

কর্পোরেট এই বিশ্ব আসরের এক যুক্তি হচ্ছে বড় দলের সাথে ছোট দলের খেলা দর্শক দেখে না। ব্যব্সায়িকভাবে লাভজনক নয়। একই রকম যুক্তি শুনেছিলাম ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপের সময়। তাই বাংলাদেশের বিরদ্ধে ভারতের নির্লজ্জ জয়। কোয়াটার ফাইনালের ওই খেলার পর সবকিছু ফাঁস করে দিয়ে আইসিসি প্রেসিডেন্ট মোস্তাফা কামাল তার পদ থেকে ইস্তফা দেন। তবুও কোন কিছুরই পরিবর্তন হয়নি।

ক্রিকেটের এই ভারতীয় ধারার শিকার সবচেয়ে বেশি ভারতীয় বংশধররা। যদি লক্ষ্য করেন আরব আমিরাত, ফিজি, ওমান, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র সব দলেই ভারতীয় খেলোয়াড়দের আধিক্য । আজকের এ ক্রিকেট নীতি তাদেরকে একটা পর্যায় পর্যন্ত অগ্রসর করছে; কিন্তু এর বেশি বাড়তেও দিচ্ছে না। এই নীতির আরেক শিকার কেনিয়া। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলা এ দলটি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ।

ভারতীয় ব্যাটসম্যান খেলতে পারে না এমন বোলারকে নিষিদ্ধ কর। ভারতীয় ব্যাটসম্যান কে আউট দিলে অ্যাম্পায়ের কে তাচ্ছিলের হাসি দেয়া, প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়ে সরাসরি হুমকি দিয়ে রাখা- নীতি একদিন ভারতের ক্রিকেটের খারাপ বৈকি, ভাল বয়ে আনবে না। জানা যায় ভারতে ক্রিকেটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল জুয়ার বাজার। যদি ভারত সব সময় যে কোনো মূল্যে জয় ছিনিয়ে নেয় সে খেলার আকর্ষণ থাকবে না। ক্রিকেট পাগল ভারতীয়রা জয় নিশ্চিত জেনে খেলা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বেশি সোনার ডিমের জন্য হাঁস এর পেট কাটা কখনই সুবুদ্ধি নয়।

ভাগ্য ভাল যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মান, রাশিয়া এ খেলা জনপ্রিয় নয়। জনপ্রিয় হলে হয়ত আজ এই খেলার কারণে যুদ্ধ লেগে যেত। যা নয় তা নিয়ে কথা না বলি। তবে এটুকু বলে রাখি বাংলাদেশে আজ দু’একজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয়। মোস্তাফিজের মত একেকটি রহস্যময় খেলোয়াড় বাংলাদেশ নিয়মিত উপহার দেবার ক্ষমতা রাখে। তবে মানসিক এ নগ্ন খেলায় যেন কোন মেধাবী ক্রিকেটারের মৃত্যু না হয়! এ জন্য সমস্বরে প্রতিবাদ করার সময় এসেছে।

ক্রিকেট আজ নীতি বিবর্জিত এক খেলা। আমি সেই খেলার এক একনিষ্ঠ ভক্ত। আর ভক্ত হিসাবে এই নীতিহীনতায় বারংবার সমর্থন দিচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত একদিন থাকবে না এই উম্মাদনা। স্টেডিয়ামে উঠবেনা দর্শকের ঢেউ। ক্রিকেট কে বাঁচাতে আওয়াজ তোল, আইসিসিতে ভারত আগ্রাসন বন্ধ হোক।

সাইফুল আজম সিদ্দিকী, একজন ক্রিকেটভক্ত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।