কারাগারে যেভাবে দিন কাটাতেন সঞ্জয় দত্ত

মুম্বাই ফিল্মপাড়ার মুন্না ভাই খ্যাত সঞ্জয় দত্ত পাঁচ বছরের কারাবাস শেষে মুক্তি পেয়েছেন। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় মুক্তি দেওয়া হয় বলিউডের এই অ্যাকশন হিরোকে। যখন পুনের কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন তার ঝুলিতে ছিল কাগজের ব্যাগ তৈরি আর রেডিও ডিস্ক জকি হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা। কারণ সেখানে কাগজের ব্যাগ বা ঠোঙ্গা তৈরি করে তিনি আয় করেছেন প্রতিদিন ৪৫ রূপি। কারাগারের রেডিওতে একজন উপস্থাপক হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন।
১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোমা হামলার ঘটনার পর, হামলাকারীর কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র কেনার অভিযোগে ‘মুন্নাভাই’ মি. দত্তর সাজা হয়। যদিও তার দাবি, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার কারণে নিজের পরিবারকে বাঁচাতেই তিনি ওই অস্ত্রটি কিনেছিলেন। পাঁচবছরের সাজা হলেও, ভালো ব্যবহারের কারণে ১৪৪ দিনের সাজা কমে যায় তার। ২০১৩ সালে তাকে পুনের ওই কারাগারে তার কারাভোগ শেষ করার জন্য পাঠানো হয়। যদিও অনেকের দাবি, সেলেব্রিটি হওয়ার কারণে তিনি অনেক বেশি প্যারোল ভোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি সেই সাজা ভোগ শেষে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু কেমন ছিল সঞ্জয়ের কারাগারের দিনগুলো? বিবিসি বাংলার বরাত দিয়ে জানা গেল, কারাগারে মি. দত্ত সবচেয়ে নিরাপত্তার ওয়ার্ড, ‘ফ্যান্সি ওয়ার্ডে’ আট ফুট বাই দশ ফুটের একটি সেলে বাস করতেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সেলগুলো ছিল ঠিক পাশেই।
তাকে কারাবন্দীদের পোশাকই তাকে পরতে হতো। তার কারাগারের বাইরে একটি ছোট বাগান ছিল, নিরাপত্তা রক্ষীদের নজরবন্দি হয়ে সেখানে তিনি হাঁটাচলা করতে পারতেন। একজন কারাবন্দী জানিয়েছেন, তাকে কারাগারে সবাই ‘বাবা’ বলে ডাকতো। কারাগারে তিনি অনেক বই পড়তেন। লাইব্রেরী থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনি দুইটি বই আনতেন।
সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠার কিছু পর কারারক্ষীরা তার কাগজের ব্যাগ বানানোর জিনিসপত্র নিয়ে আসতো। নিউজ পেপার কেটে কেটে তিনি ব্যাগ বানাতেন। এতে প্রতিদিন তার আয় হতো ৪৫ রুপি। দুপুরে তাকে কারাগারের অভ্যন্তরীণ রেডিও কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে তিনি রেডিও জকি হিসাবে একটি প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করতেন। দুপুরের খাবারের পরও তিনি রেডিওতে কাজ করতেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাতের খাবার খেয়ে ৮টার মধ্যে তাকে নিজের সেলে ঢুকে পড়তে হতো। পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনি সেখানেই তালাবন্ধ থাকতেন।
এদিকে কারামুক্তির পর ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জানিয়ে সঞ্জয় দত্ত বলেন, ভক্তদের সমর্থনের কারণেই আজ আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। পুনের বিমানবন্দরে পরিচালক রাজকুমার হিরানিও ছিলেন। তিনি বলেন, সঞ্জয় দত্ত ফিরে আসায় আমি অনেক খুশি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্র জানিয়েছে, মুম্বাইয়ে পৌঁছানোর পর সঞ্জয় সরাসরি সিদ্ধিভিনায়ক মন্দিরে যাবেন। সেখান থেকে তিনি মেরিন লাইন স্টেশনের কাছে অবস্থিত বাদা কবরস্থানে যাবেন। সেখানে তার মা অভিনেত্রী নার্গিস সমাহিত আছেন। এরপর বাসায় ফেরার পর তিনি তার বাবার ছবির সামনে একটি পূজা করবেন।
এনই/এইচএন/পিআর