অনলাইন জগতে সহনশীল হওয়ার কৌশল
আমাদের দৈনন্দিন জীবন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে গেছে। সকালবেলা ফোনের নোটিফিকেশন থেকে শুরু করে বন্ধুদের স্ট্যাটাস দেখা সবই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এছাড়াও ভিডিও কল, নিউজ পড়া বা কাজের জন্য মেসেজ চেক সবই আমাদের নিত্যদিনের অংশ। বলা যায়, অনলাইন মাধ্যম আমাদের জীবনকে করেছে দ্রুত, কার্যক্রমকে করেছে গতিশীল। তবে এরই সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি হেট স্পিচ, ট্রোলিং, বুলিং, অপপ্রচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সঙ্গে। তাই এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় ডিজিটাল সহনশীলতা বা ‘নেটিকেট’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? চলুন জেনে নিন-
১. অন্যের অনুভূতিকে সম্মান জানানো
ডিজিটাল সহনশীলতার প্রথম কাজই হলো অন্যের অনুভূতিকে সম্মানের চোখে দেখা। এর মানে এই নয় যে আপনার রাগ কমাতে হবে, বরং এমনভাবে অনলাইনে আচরণ করা যাতে কারো মনে আঘাত না লাগে। কখনো কখনো বিরক্তি বা রাগে আমরা এমন মন্তব্য করি যা বিতর্ককে আরও উত্তপ্ত করে। অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো। কিন্তু সহনশীল ব্যবহার মানে এক মুহূর্ত থেমে ভাবা, প্রয়োজনে নিরব থাকা। প্রয়োজনে সমস্যাজনক পোস্ট রিপোর্ট করা।
২. মন্তব্য করার আগে ভাবা
অনলাইনে কিছু লেখার আগে নিজেকে প্রশ্ন করা জরুরি: ‘এই কথাটি কি কারো অনুভূতিতে আঘাত আনতে পারে?’ অথবা ‘আমি কি আরও ভদ্রভাবে বলতে পারি?’ কেননা প্রতিটি পোস্ট, কমেন্ট বা শেয়ার অন্যের মনোভাব ও মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। সতর্কভাবে লেখা এবং ভদ্রভাবে মত প্রকাশ করা অনলাইনে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. নিরাপদ অনলাইন ব্যবহার
ডিজিটাল সহনশীলতা মানে শুধু ভদ্র আচরণ নয়, নিরাপদ অনলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করাও এর অংশ। প্রতিদিন আমরা ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, নিজেদের অবস্থান শেয়ার করি। যদি অসতর্ক হই, তাহলে নিজের এবং অন্যের অনলাইন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই নিরাপদ অনলাইন ব্যবহার মানে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়ানো, ভুয়া খবর যাচাই করা, সন্দেহজনক কনটেন্ট রিপোর্ট বা ব্লক করা। এভাবে আমরা নিজেকে ও কমিউনিটিকে রক্ষা করতে পারি।
৪. ভিন্নমতকে সম্মান দেওয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ আসে ভিন্ন সংস্কৃতি, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বিশ্বাস নিয়ে। সবাই একরকম মত পোষণ করে না, আর সম্ভবও না। সহনশীল ব্যবহার মানে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্মান করা। তাই বলে তাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে এমনটিও নয়। তবে মনোযোগ দিয়ে শোনা, দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করা এবং অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়ানো। তাহলেই মানসিক শান্তি ও সুস্থ অনলাইন কমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব।
৫. ট্রোলিং ও বুলিং প্রতিরোধ
অনলাইনে ট্রোলিং বা বুলিংয়ের শিকার আজকাল নিত্যদিনের বিষয়। উত্তেজিত হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো সহজ হলেও তা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। সহনশীল ব্যবহার মানে ধৈর্য ধরা, নিরব থাকা, বিরক্ত না হওয়া এবং প্রয়োজনে রিপোর্ট করার ক্ষমতা রাখা। কখনো কখনো কোনো বিষয় এড়ানো বা নিরব থাকা আপনার সেরা প্রতিবাদ হতে পারে।
আজ ১৬ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস। অর্থাৎ এই দিন থেকেই আমরা শুরু করতে পারি অনলাইনের সহনশীলতা। কেননা অনলাইনে প্রতিটি ক্লিকের জন্য আমরা দায়িত্বশীল। আমাদের প্রতিটি মন্তব্য বা শেয়ার কেবল ব্যক্তিগত অংশ নয়, পুরো অনলাইন কমিউনিটিকে প্রভাবিত করে। যদি আমরা সচেতন হই, সহনশীল হই এবং কখনো কখনো নিরব থাকার সাহস দেখাই, অনলাইন বিশ্বের পরিবেশ হবে নিরাপদ, মানবিক এবং সুন্দর।
আরও পড়ুন
সোশ্যাল মিডিয়া নজর রাখছে আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও
সত্যিই কি ভবিষ্যতে ফোন-কম্পিউটার থাকবে না?
তথ্যসূত্র: ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউনেস্কো, ওইসিডি
কেএসকে/জেআইএম