আইসিটি খাতে সেন্ট্রালাইজেশন
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পথে সময়োপযোগী সংস্কার
মো. নাজমুল হুদা মাসুদ
বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে ডিজিটাল রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর অভিযাত্রায় দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। কিন্তু এ খাতে বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে থাকা সরকারি আইসিটি জনবল ও সেবা ব্যবস্থার কারণে নীতি বাস্তবায়নে জটিলতা, সমন্বয়ের অভাব এবং সম্পদের অপচয় স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই বাস্তবতায় সংস্কার কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত সরকারি আইসিটি প্রফেশনালদের সেন্ট্রালাইজেশন ও একক সার্ভিস কাঠামো গঠন এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মূল লক্ষ্য
- আইসিটি ক্যাডার বা একক সার্ভিস কাঠামোর আওতায় সমস্ত সরকারি আইসিটি কর্মকর্তাদের নিয়ে আসা।
- কেন্দ্রীয়ভাবে দক্ষ জনবল ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া একীভূত করা।
- প্রযুক্তিগত দক্ষতার মানোন্নয়ন ও ডিজিটাল প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয় বৃদ্ধি করা।
- প্রশাসনিক বাধা হ্রাস ও ICT-driven decision making নিশ্চিত করা।
কেন এই সেন্ট্রালাইজেশন প্রয়োজন
১. দক্ষতার অপচয় রোধ
বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও প্রকল্পে আইসিটি কর্মকর্তারা আলাদাভাবে কাজ করছেন। এতে করে একজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা একই ধরনের কাজ পুনরায় করছেন, অথচ অন্য দপ্তরে একই দক্ষতার অভাব রয়ে যাচ্ছে।
২. সমন্বিত নীতি বাস্তবায়ন
একক সার্ভিস কাঠামো থাকলে প্রযুক্তি নীতি, সাইবার নিরাপত্তা, সফটওয়্যার স্ট্যান্ডার্ড এবং ডেটা ম্যানেজমেন্ট একীভূতভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

৩. প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস
প্রতিটি দপ্তরে আলাদা পদ ও বেতন কাঠামো থাকার কারণে পদোন্নতি ও স্থানান্তরে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। একক সার্ভিস হলে ক্যারিয়ার গ্রোথ ও প্রণোদনা নীতি হবে স্পষ্ট ও ন্যায়সংগত।
৪. প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্তে স্বনির্ভরতা
বিদেশি পরামর্শক বা আউটসোর্সড সেবার ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। সরকার নিজস্ব আইসিটি পেশাজীবীদের মাধ্যমে প্রকল্প মূল্যায়ন, সাইবার সিকিউরিটি ও সফটওয়্যার অডিট সম্পন্ন করতে পারবে।
গুরুত্ব: রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ
আইসিটি খাত এখন জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি সমন্বিত ও পেশাদার ICT সার্ভিস গঠন করলে—
- সাইবার হুমকি মোকাবিলা সহজ হবে,
- সরকারি তথ্য সুরক্ষিত থাকবে,
- জনসেবার ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত হবে এবং
- দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করা যাবে।
চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়ন ভাবনা
অবশ্যই, এই সংস্কার বাস্তবায়নে কিছু প্রশাসনিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিদ্যমান পদমর্যাদা, বেতন কাঠামো ও নিয়োগ বিধি সমন্বয় করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে একটি শক্তিশালী “ICT Cadre Management Authority” বা “National ICT Service Commission” গঠন করা গেলে এই প্রক্রিয়া টেকসই করা সম্ভব।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নির্ভর করবে প্রযুক্তি-নির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর। তাই সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইসিটি প্রফেশনালদের সেন্ট্রালাইজেশন ও একক সার্ভিস বাস্তবায়ন কেবল একটি প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি প্রস্তর। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশীয় আইসিটি বিশেষজ্ঞদের মর্যাদা ও দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে, এবং ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’-এর বাস্তব রূপায়ণ দ্রুত সম্ভব হবে।
লেখক: প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা মাসুদ
রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী, সাইবার সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট (SB-CIRT)
স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ
ও জয়েন্ট সেক্রেটারি (একাডেমিক), বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি
এমআরএম/জিকেএস