রাউজানে রাবার বাগান ভ্রমণে স্মৃতিময় একটি দিন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৪২ এএম, ১৪ মার্চ ২০২৩

রায়হান উদ্দিন

শীতের দিনে ভ্রমণ খুবই আনন্দময়। শীত আসলেই সবাই ছুটে চলে নানা পর্যটন এলাকা। আর তা যদি হয় বন্ধুরা মিলে তাহলে তো আর কথাই নেই। বেশ মজা করা যায় বন্ধুরা মিলে যে কোন জায়গায় একসঙ্গে গেলে। সিদ্ধান্ত হলো, রাউজানে রাবার বাগান যাওয়ার। সবাই রাজি হয়ে গেলাম। ছুটির দিন দেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।

রাউজানের রাবার বাগান চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশি দূরে নই অথচ জানেন না অনেকেই। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৩৭.২ কিলোমিটার দূরত্বে রাউজান শহর অবস্থিত আর ঢাকা থেকে রাউজানের দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। শনিবার ঠিক ৬টায় ঘুম থেকে উঠলাম।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঢাকার ভেতরেই ঘুরে আসুন নিরিবিলি দুই স্থানে 

৭টাই মুরাদপুর চলে গেলাম রাউজানের গাড়িতে উঠতে। রাউজানের গাড়িতে জলিলনগর পর্যন্ত যাই। যাওয়ার সময় রাউজানে ডুকতেই দেখা যায় নৈসর্গিক দৃশ্য। রাউজান অসম্ভব সুন্দর। আমরা নেমে গেলাম জলিলনগরের একটু আগে মুন্সির ঘাটায়। সেখান থেকে সি এন জি করে আমির হাট গেলাম।

সুনসান নিরিবিলি গ্রাম্য পথে গাড়ি চলে হাঁকিয়ে। সেখান থেকে আরেকটা গাড়ি করে গর্জনীয়া এলাকায় রাবার রাবার বাগানের সামনে নেমে গেলাম। হাঁটি হাঁটি পা পা করে ছুটছি রাবার বাগানের পথে। ভেতরে ঢুকতেই তখন ৯টা ছুঁই ছুঁই।

রাবার বাগানে ডুকেই দেখছি দৃষ্টিনন্দন সৃজনে হাজার হাজার রাবার গাছ। সারি সারি রাবার গাছগুলো দেখতে কতই না সুন্দর দৃশ্যে মেতে উঠলাম সবাই। বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন রাউজানের অধীনে তিনটি রাবার বাগান আছে। হলদিয়া, ডাবুয়া ও রাউজান ইউনিয়নে এই তিনটি রাবার বাগান।

jagonews24

আরও পড়ুন: এক জাহাজেই ঘুরতে পারবেন ১৩৫ দেশ, জানুন খরচাপাতি 

তিনটি রাবার বাগানগুলো শুরু করার পর পরবর্তীতে ১৯৯১ ও ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে রাবার বাগানগুলোতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আবার বাংলাদেশ বন শিল্প কর্পোরেশন থেকে নতুন করে রাবার গাছ লাগিয়ে সক্রিয় করে তোলে। পাহাড় ও টিলার মধ্যে এই রাবার গাছগুলো লাগানো হয়।

দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে৷ বাগানের ভেতরে হাঁটলে অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। রাবার বাগানের কর্মচারীরা রাবার গাছ থেকে রাবার নিচ্ছে। গাছ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষণ করা কষ দিয়ে তৈরি করা হয় এই রাবার। কতই যে সুন্দর লাগছে। আমরা হাটঁতে হাটঁতে ভেতরে দেখতেছি রাবার শুকাচ্ছে ফ্যাক্টরির মধ্যে।

রাবার বাগানের ফ্যাক্টরিতে রাবার প্রক্রিয়াজাত করে শুকনো রাবার উৎপাদিত করে। রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নে ২ হাজার ৮০০ একর পাহাড় ও টিলার উপর এক লাখ ৩৬ হাজার উৎপাদনশীল রাবার গাছ আছে।

যেখান থেকে শীতের মৌসুমে প্রতিদিন ১০ হাজার কেজি রাবার আহরণ করে। আমরা হলদিয়া রাবার বাগান ঘুরে চলে গেলাম তার পাশের ইউনিয়ন ডাবুয়ার রাবার বাগানে। সেখানেই ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে জিন্দাপার্ক ঘুরে যা যা দেখবেন 

গাছগুলো দেখলেই হৃদয়ে প্রশান্তি চলে আসে। ডাবুয়াতে আছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ টি রাবার গাছ আছে। তার মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৭ টি উৎপাদনশীল গাছ আছে। সে গাছগুলো থেকে শীতের মৌসুমে ৬০০০ কেজির মতো রাবার আহরণ করে।

রাবার বাগানের সৌন্দর্যতা উপভোগ করতে করতে দুপুর হয়ে গেল। এবার দুপুরের খাবার খাওয়ার পালা। আমরা সেখান থেকে আরেকটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম রাউজান পৌরসভায়। জলিলনগরে আপন রোস্তোরাতে দুপুরের ভাত খেয়ে নিলাম সবাই মিলে। সেখানে থেকে ৫ মিনিট লাগে ৭ নং রাউজান ইউনিয়নের রাবার বাগানে।

চলে গেলাম রাউজানের তৃতীয় ও শেষ রাবার বাগানে। রাউজানে ৩ টা রাবার বাগান আছে। ৩টি রাবার বাগান পাশাপাশি ইউনিয়নে। সেখানে টিলা ভূমি নিয়ে রাবার গাছগুলো লাগানো হয়। রাউজান ইউনিয়নে রাবার বাগানে গাছ আছে ১ লাখ ৯৩ হাজার। এই গাছগুলোর মধ্যে উৎপাদনশীল গাছ আছে ৭৬ হাজার ৯০টি।

এই গাছগুলো থেকে প্রতিদিন শীতের মৌসুমের শুরুতেই ৫০০০ রাবার আহরণ করা হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি রাবারের বাজার মূল্য ১৯০ টাকা। শীতের মৌসুমে ভালো উৎপাদন করা যায়। এক অপরুপ সৌন্দর্য রাবার বাগান দেখে পাশে গিরিছায়াতে গেলাম। কিছুক্ষণ মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে আনন্দ উপভোগ করলাম।

আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যা দেখবেন 

এটি একটি ‘মিনি চিড়িয়াখানা’ বলা যায়। সেখানে বানর, ভাল্লুক, কবুতর, পেরো, গুইসাপ কচ্চপ, কয়েক প্রজাতির পাখি, খরগোশ, অজগর’সহ আরও অনেক কিছু রাখা হয়েছে। ঘনিয়ে আসছে দিন।

jagonews24

আপনারা চাইলে ডাবুয়া ঐতিহ্যবাহী ঘর-বাড়ি, উপজেলা পরিষদ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাহাড়তলি মহামুনি মন্দির, পিংক সিটিসহ আরো অনেক জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন। সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে সারাদিনের মনভোলানো একরাশ স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলাম যার যার বাসায়।

কীভাবে যাবেন?

চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর ও অক্সিজেন থেকে বাস রাউজানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৬৫ টাকা। সিএনজিতে চড়েও যাওয়া যায়। মুন্সিরঘাটা থেকে সিএনজি করে আমিরহাট ২০ টাকা।

সেখান থেকে আরেকটি সিএনজিতে চড়ে রাবার বাগান যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে খরচ পড়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা।

আরও পড়ুন: দেবতাখুম ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, কত খরচ? 

থাকবেন কোথায়?

চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। যারা থাকতে চান চট্টগ্রাম শহরে গিয়েও রাত্রিযাপন করতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরে আছে বেশ নান্দনিক হোটেল।

কোথায় খাবেন?

জলিল নগরে আপন রেঁস্তোরা আছে। সেখানে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। আরও স্থানীয় হোটেল আছে সেখারনে। লোকজন বেশি থাকলে আগে থেকেই অগ্রিম খাবার বুকিং দিয়ে রাখবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।