কৃষি পাঠাগারের সুফল পাচ্ছেন নওগাঁর কৃষক


প্রকাশিত: ০৪:৪৮ এএম, ০১ মার্চ ২০১৬

নওগাঁর মান্দায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি তথ্য পাঠাগার। কৃষি তথ্য পাঠাগারের মাধ্যমে এলাকার কৃষক সুবিধা ভোগ করছেন। এতে অনেকে উপকৃত হচ্ছেন এবং ফসলের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরজমিনে ঘুরে এসে এমন তথ্য জানা গেছে।

কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে কৃষি বিষয়ে জানতে হয়। আর জানতে হলে বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু কৃষক উপযোগী কোন কৃষি লাইব্রেরি বাংলাদেশে না থাকায় নিজের অভাব থেকে মান্দা উপজেলার কালীগ্রাম গ্রামে লাইব্রেরি তৈরি করেছেন শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েন্ট স্কুলে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

৩ বিঘা জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে কৃষি লাইব্রেরি এবং রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন ফলজ ও ওষধি গাছ। লাইব্রেরি দেখাশুনার জন্য রয়েছে জোসনা খাতুন এবং বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছে আজাহার হোসেন ও হযরত আলী নামে দুইজন কর্মী।

Krishi-Library

কৃষি তথ্য পাঠাগারে কৃষি বিষয়ের উপর বিভিন্ন ধরনের বই সংরক্ষিত রয়েছে। কৃষকরা ইচ্ছে করলে বই পড়ে তার সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন হলে এলাকায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে কৃষকদের দেখানো হয়। এতে কৃষকরা কৃষি বিষয়ে নতুন কিছু জানতে পারেন।

এছাড়া গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ে সমস্যা সমাধান করা যায়। অনেক বিদেশি নাগরিক অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, ফিলিপাইন থেকে এই প্রতিষ্ঠানে বেড়াতে এসেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর প্রার্থনাম এসেছিলেন বিষাক্ত একটি আগাছা নিয়ে এবং কৃষকদের সঙ্গে সেমিনার করেছেন। কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বিভিন্ন তথ্য।

গ্রামের কৃষক খন্দকার গোলাম রহমান জানান, আগে নিজেদের ইচ্ছেমত বা দোকানদারের পরামর্শে জমিতে সার, ওষুধ দিতাম। ফসল রোপণের জন্য জমিতে কি পরিমাণ সার, ওষুধ দিতে হবে এবং কৃষি লাইব্রেরিতে বই পড়ে ও শিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ব্যাপক সুবিধা পাচ্ছি। এখন আগের তুলনায় কৃষিতে খরচ মোটামুটি কম হচ্ছে ও ফলন ভাল হয়।

কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, এখান থেকে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে উপকৃত হয়েছেন। কৃষি বিষয়ক নতুন কোন কিছু উদ্ভাবন হলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে আমাদের দেখানো হয়। অবসর সময়ে লাইব্রেিতে এসে বই পড়ে কৃষি বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারি।

এছাড়া মাছ চাষি শারফিন শাহা জানান, লাইব্রেরিতে কৃষি বিষয়ে যে বই আছে তা থেকে ব্যাপক সহযোগিতা পায়। এছাড়া গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ে ও মাছ চাষে সমস্যার সমাধান করা হয়। এ লাইব্রেরির মাধ্যমে আমরা খুবই উপকৃত হচ্ছি।

Krishi-Library

শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের পরিচালক শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ জানান, ছোট থেকেই কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। উদ্দেশ্য লাইব্রেরির মাধ্যমে কৃষির সংযোগ ঘটানো। অনেক পরে বুঝতে পারলাম জেনেটিক্যালি সব ডেভলোপ হয়। কৃষি বিষয়ে আমার যত অভাব আছে তা আমি পূরণ করার চেষ্টা করছি। আমার মৃত্যুর পর সমাজের প্রয়োজনে লোকজন এটিকে টিকিয়ে রাখবে। এটা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেণ, মানুষের অনেক পরিকল্পনা থাকে। সবাই তো তা বস্তবায়ন করতে পারে না। আমি যে স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি এটাই বড় কথা। তবে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছি। কৃষির উপর একটি বই লিখছি।
 
তিনি আরও জানান, মানুষের প্রয়োজনে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি তৈরিতে অনেক ওষধি গাছপালা নষ্ট ও হারিয়ে গেছে। আমার স্বল্প জায়গায় কিছুটা হলেও তা সংরক্ষণ করতে পেরেছি। কৃষকদের সুবিধার জন্য কৃষি পুঞ্জিকা প্রকাশ ও প্রতি মাসে কৃষি বিষয়ে সেমিনার হয় করা হয়।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।