জমি দখলে বাধা, যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে হাতুড়িপেটা

জমি দখলে বাধা দেওয়ায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৪) নামে এক ছাত্রকে হাতুড়িপেটার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশে যৌথভাবে চার শতক জমি কেনেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী মুজাহিদ হাসান। স্থানীয় ওমর ফারুকের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনার তিন বছর পার হলেও এখনো বুঝে পাননি। সেই জমিতে যবিপ্রবি ছাত্র মামুন ফেন্ডস ফটোকপি নামে একটি দোকান দেন। দোকান দেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল মামুনের কাছে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
চাঁদা না দেওয়ায় সেই ফটোকপির দোকান ও জমি জোর করে বাদল দখলের চেষ্টা করেন। মামুন এতে বাধা দেন। এর জেরে বৃহস্পতিবার রাতে লোকজন নিয়ে বাদল মামুনকে হাতুড়িপেটার পর পালিয়ে যান। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
যবিপ্রবি প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, এর আগে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে। সম্প্রতি তিনি সপদে বহাল আছেন। বাদলের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ডজনখানেক মামলা আছে। সম্প্রতি হত্যা মামলায় কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মামুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন জমি কিনলেও জমির মালিক ওমর ফারুক সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। এরপরও সেই জমিতে একটি ফটোকপি দোকান দিয়েছি। ফটোকপির দোকানের আয়ে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জমি দখলে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল বিভিন্ন সময় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। চাঁদা না দিলে এ জমিতে উঠতে না দেওয়ার হুমকি দেন। কোন ব্যবস্থা না করতে পেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। বিচারক জমিটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিষয়টি বাদল জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন নিয়ে রাতে দোকান ও জমি দখল করতে আসেন। তাদের বাধা দিলে আমাকে হাতুড়িপেটা করা হয়।’
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী পারভেজ হোসেন বলেন, ‘বাদল কর্মচারী হলেও স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী। তার নামে অনেক অভিযোগ। হঠাৎ করেই একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে মারধর করা খুবই জঘন্য কাজ।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক শারিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামুনকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করলেও বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। বাম পায়েও আঘাতের চিহ্ন আছে।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনা শুনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিলন রহমান/এসজে/জিকেএস