কৃষকের আর্তনাদ

ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি, তবুও জমিতে সেচ জোটেনি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৫
সেচের অভাবে চষাবাদ করতে পারছেন না কৃষক আতোয়ার রহমান/ছবি-জাগো নিউজ

সেচের অভাবে প্রায় সাড়ে ৯ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না গাইবান্ধার কৃষক আতোয়ার রহমান। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে স্থানীয় থানা, ইউএনও, কৃষি অফিস এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি-ক্ষুদ্র সেচ) অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাননি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের দেওগাঁও গ্রামের কৃষক আতোয়ার রহমান। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরে উপজেলার সেচ কমিটির মাধ্যমে তিনি একটি গভীর নলকূপ সেচ লাইসেন্স পান। যার লাইসেন্স নম্বর-গ/৩৯৮। সেসময় থেকে গভীর নলকূপটি দেওগাঁও মৌজায় সেচ পরিচালনা করে আসছেন। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে একই গ্রামের মৃত পচা প্রধানের ছেলে বাদশা মাসুদ প্রধান অবৈধভাবে পাশাপাশি গভীর নলকূপ সেচ লাইসেন্স করেন। যার লাইসেন্স নম্বর-অ/৩৬৭৬। পরবর্তী সময়ে কৃষক আতোয়ার রহমান এ বিষয়ে অভিযোগ করার পর বাদশা মাসুদ প্রধানের অবৈধ লাইসেন্স বাতিল ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়। এরপর চলমান ইরি মৌসুমে আবার দেওগাঁও মৌজায় কমেডিং বা স্কিমের আওতায় এলাকায় পানি সেচ পরিচালনা শুরু করে তিনি।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ আতোয়ারের আবাদি জমিতে সেচ দেওয়াকালে পানির ড্রেন ভেঙে ক্ষতিসাধন করেন বাদশা মাসুদ। এতে বাধা দিতে গেলে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছেন তিনি এবং পানি নিতে দিচ্ছেন না।

 কৃষকের আর্তনাদ, ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি, তবুও জমিতে সেচ জোটেনি

সরেজমিন দেখা যায়, পানির অভাবে কৃষক আতোয়ার রহমানের কিছু জমি ফেটে চৌকির হয়ে গেছে। আর কিছু জমিতে ধানের আবাদ থাকলেও পানির অভাবে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আতোয়ার রহমান বলেন, ‘ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি। বিষয়টি এখনো সমাধান করতে পারেননি তিনি। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে স্থানীয় থানা, ইউএনও, কৃষি অফিস, বিএডিসিতে অভিযোগ করলেও জমিতে পানি জোটাতে পারিনি। আবাদ না করতে পারায় আমার প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ক্ষতি হবে। জমিতে সেচের ব্যবস্থা না করা গেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’

কৃষকের আর্তনাদ, ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি, তবুও জমিতে সেচ জোটেনি

আতোয়ার রহমানের স্ত্রী রুবি বেগম বলেন, ‘২০০ ফুট ড্রেন ভেঙে দেওয়ায় জমিতে সেচ দিতে পারছি না। অথচ অবৈধভাবে সেচ পরিচালনা করে আবাদ করছেন বাদশা মাসুদ প্রধান। চাষাবাদ না করতে পারলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাদশা মাসুদ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কৃষকের আর্তনাদ, ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি, তবুও জমিতে সেচ জোটেনি

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে আতোয়ার ওদেরকে (বাদশা মাসুদ) পানি দেয়নি বলে ওরা অনেক ক্ষিপ্ত। তাই পরে সমাধান হয়নি।’

এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকী সিদ্দিকীকে পাওয়া যায়নি।

কৃষকের আর্তনাদ, ইউএনও স্যারের খালি পা দুটা ধরিনি, তবুও জমিতে সেচ জোটেনি

তবে সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম রাব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, বিধি অনুযায়ী বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করছি। মাঠ পর্যায়ে লোকও পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।

এ এইচ শামীম/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।