কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ৩১ মে ২০২৫
অরনকোলা পশুর হাট-ছবি জাগো নিউজ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকনগর গ্রামের আব্দুল মান্নান একজন প্রান্তিক কৃষক। তিনি ৮ মাস ধরে দুটি ষাঁড় গরু পালন করছেন। কোরবানির ঈদের আগে ষাঁড় দুটি বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। তার একটি গরুর ওজন সাড়ে ৪ মণ অপরটি ৪ থেকে সোয়া ৪ মণ হবে। গত ২০ দিন ধরে তার বাড়িতে ব্যাপারীরা গরু দেখছেন এবং দরদাম করছেন। আব্দুল মান্নান দুই গরুর দাম হাঁকছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

সোমবার (২৬ মে) উপজেলার মিরকামারী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন দরদাম করে এ গরু দুটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কিনেছেন।

কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

গ্রামের হাট আর শহরের হাটে গরুর দামে বিস্তর পার্থক্য-ছবি জাগো নিউজ

মঙ্গলবার (২৭ মে) গরু ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন উপজেলার অরনকোলা পশুর হাটে গরু দুইটি বিক্রির জন্য নিয়ে যান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ীরা এই দুই গরুর দরদাম করেন। আমজাদ হোসেন এই দুই গরুর দাম হাঁকেন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় এই দুই গরু কিনেন ঢাকার গরু ব্যবসায়ী রফিকুল আলম। তিনি এ দুই গরুসহ ১৬টি গরু এ হাট থেকে কিনে রাতে ঢাকায় নিয়ে যান।

আরও পড়ুন

রফিকুল আলমের কাছে এই দুই গরুর ঢাকায় বাজার মূল্যে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরু দুই স্বাস্থ্যবান ও দেখতেও সুন্দর। ঢাকার বর্তমান বাজার মূল্যে থাকলে সাড়ে ৪ মণ ওজনের গরু ১ লাখ ৪০ থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং সোয়া ৪ মণ ওজনের গরুটি ১ লাখ ৩০ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে পারে। এই গরু ঢাকায় ২ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। বাজার দর বেড়ে গেলে এই দুই গরুর দাম ৩ লাখ টাকাও হতে পারে।

প্রান্তিক কৃষক আব্দুল মান্নানের দুই গরু ২ লাখ ৪০ টাকায় বিক্রির পর ষাঁড় দু’টি আরেক দফা ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। এখন ঢাকায় পৌঁছানোর পর আরেক দফা বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। এবার বিক্রি হলে বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা হবে বলে আশা করেছেন ব্যবসায়ী। এভাবেই কৃষকের দুই গরু তিন দফা হাত বদল হয়। প্রতিবার হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

প্রান্তিক কৃষক আব্দুল মান্নানের দুই গরু ২ লাখ ৪০ টাকায় বিক্রির পর ষাঁড় দু’টি আরেক দফা ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। এখন ঢাকায় পৌঁছানোর পর আরেক দফা বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। এবার বিক্রি হলে বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা হবে বলে আশা করেছেন ব্যবসায়ী। এভাবেই কৃষকের দুই গরু তিন দফা হাত বদল হয়। প্রতিবার হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

খামারে বেড়ে ওঠা গরু-ছবি জাগো নিউজ

আরও পড়ুন

অরনকোলা পশুর হাটে মঙ্গলবার কথা হয় গরু ব্যবসায়ী আফসার আলীর সঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরুর সমাগম বেশি। দামও তুলনামূলক কম। হাটে সাধারণত যারা গরু নিয়ে আসে তারা প্রায় সবাই ব্যবসায়ী। গ্রামের সাধারণ কৃষকরা তেমন একটা গরু নিয়ে আসেন না। তারা নিজ বাড়িতে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেন। তারা হাটে এনে বিক্রি করেন। এখন হাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গরুর ব্যাপারীরা। এরা শত শত গরু এ হাট থেকে কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন যারা কোরবানি দেবেন তারাও অনেকেই হাটে এসেছেন। তারা খুব কম সংখ্যক গরু এ হাটে কিনছেন।

কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

প্রান্তিক কৃষকদের থেকে গরু পালনে খরচ বেশি হয় খামারির-ছবি জাগো নিউজ

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গরু ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম বলেন, ঈশ্বরদীর প্রান্তিক কৃষক কোরবানির জন্য গরু পালন করেন পাশাপাশি এখানে অসংখ্য ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে। যেখানে কোরবানির গরু পালন করা হয়। এখন এসব গরু হাটে আনা শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদীর গরু বেশির ভাগ দেখতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হয়। ঢাকার বাজারে এসব গরুর কদর ভালো। তাই প্রতিবছর অরনকোলা হাট ও বিভিন্ন খামার থেকে গরু সংগ্রহ করি। তবে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কাছে থেকে গরু কিনতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারতাম পাশাপাশি কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পেতেন। কিন্তু এটাতো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

ঈশ্বরদীর গরু বেশির ভাগ দেখতে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হয়। ঢাকার বাজারে এসব গরুর কদর ভালো। তাই প্রতিবছর অরনকোলা হাট ও বিভিন্ন খামার থেকে গরু সংগ্রহ করি। তবে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কাছে থেকে গরু কিনতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারতাম পাশাপাশি কৃষকরাও ন্যায্য মূল্য পেতো। কিন্তু এটাতো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন

ঈশ্বরদীর অরনকোলা গরু ব্যবসায়ী তানভীর ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী গোলাম কিবরিয়া সোহান জাগো নিউজকে বলেন, একজন প্রান্তিক কৃষক দুইটি গরু নিজ বাড়িতে পালন করলে আমাদের তুলনায় তাদের গরু পালনে খরচ অনেক কম হয়। তারা বাড়ির শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট, ভাতের মার, ক্ষেত থেকে কেটে আনা ঘাস খাইয়ে স্বল্প খরচে গরু লালন-পালন করতে পারেন। তাদের খুব কম পরিমাণ খাদ্য বাজার থেকে কিনে গরুকে খাওয়াতে হয়। সতেজ ঘাস খাওয়ার ফলে এসব গরুর স্বাস্থ্য দেখতে সুন্দর হয়।

কোরবানির গরু হাত বদল হলেই দাম বেড়ে যায় ১০-১৫ হাজার টাকা

হাটে উৎসবমুখর পরিবেশে বেচাকেনা হয় গরু-ছবি জাগো নিউজ

তিনি বলেন, কৃষকদের কাছে এসব গরু সাধারণত ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ীরা বাড়িতে গিয়ে কিনে থাকেন। তারপর এরা এসব স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী ও হাট-বাজারে বিক্রি করেন। আমাদের মতো খামারিদের হয় শতভাগ বাজারের কেনা খাবার দিয়ে গরু পালন করতে। বিশেষ করে ঘাস পর্যন্ত আমাদের কিনতে হয়। প্রান্তিক কৃষকদের থেকে আমাদের গরু পালনে খরচ বেশি হয়। তাই প্রান্তিক কৃষকদের কাছে থেকে ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ীরা কিছুটা কম দামে গরু কিনে হাটবাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়।

এসকেএম/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।