ভিজিএফের তালিকায় প্রধান শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী-রাজনৈতিক নেতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ১৬ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ঈদুল আজহা উপলক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিজিএফের তালিকায় দরিদ্রদের নামের পরিবর্তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকসহ প্রায় দুই হাজার সচ্ছল ব্যক্তির নাম।

অভিযোগ রয়েছে, এসব নামের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া চালের স্লিপ চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দিয়েছিলেন আগেই। তবে বিতরণের সময় স্থানীয় জনতা বাধা দেওয়ায় বেনামি স্লিপের চাল উত্তোলন করতে পারেননি তারা। ফলে ঈদুল আজহার আগের দিন (৬ জুন) বিতরণ শেষে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে থেকে যায়।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ হাজার ৭৪৫ জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৫৭ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ১০ কেজি চাল। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ তালিকা প্রস্তুত করেন। পরে উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে তালিকা অনুমোদন দেয়।

তালিকায় দেখা যায়, ১১৩৮ নম্বরে রয়েছেন শ্রী স্বপন কুমার সরকার। তিনি বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২৫৭ নম্বরে রয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান। ২৫৮ নম্বরে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আরমান আলী। ২৯২১ নম্বরে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী। ২৯৩৯ নম্বরে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান। ২৯৪৯ নম্বর তালিকায় রয়েছেন সচ্ছল ব্যক্তি আইনুল হক। এভাবে সচ্ছল মানুষদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আরমান আলী বলেন, ‘ভিজিএফ চাল পাওয়ার মতো ব্যক্তি আমি না। আমি কখনই ভিজিএফ চাল পাইনি। কীভাবে তালিকায় নাম এলো তা বলতে পারি না।’

শিক্ষক আশরাফুজ্জামান জানান, কীভাবে ভিজিএফের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। ভিজিএফ তালিকায় নাম থাকায় এখন তিনি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। অথচ তিনি কখনই ভিজিএফ চাল উত্তোলন করেননি বলেও জানান।

ভিজিএফের তালিকায় প্রধান শিক্ষক, সরকারি চাকরিজীবী-রাজনৈতিক নেতা

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান জানান, তার নাম ভিজিএফের তালিকায় দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছেন। কারা তার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন সেটা তার জানা নেই।

তার দাবি, এসব নাম দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা চাল বিক্রি করে দেন। তিনি তদন্ত করে এর বিচার দাবি করেন।

তবে বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, এই তালিকা দিয়ে গত ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ করেছেন তিনি। এবারও এই তালিকা দিয়েই বিতরণ করা হয়েছে। তালিকায় ভুলক্রমে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে স্লিপ বিক্রির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

চাল বিতরণে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) রবিউল ইসলাম জানান, বিতরণের শেষ দিনে ১৮৪০ জন তালিকাভুক্ত ব্যক্তি চাল নিতে আসেননি। এসব ব্যক্তির বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে রেখে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তালিকা নির্ভুল করে বাকি চাল বিতরণ করা হবে।

রোকনুজ্জামান মানু/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।