সন্তান হারিয়ে দিশাহারা, সহযোগিতার সমবণ্টন চান শহীদ জুয়েলের মা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২৫

গত বছরের ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরও ঢাকার সফিপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালানো হয়। তখনও হুকুমের গোলামরা জানত না তাদের শাসক পালিয়ে গেছে। শাসকের নির্দেশে গোলামের সেই গুলিতে ওইদিন শহীদ হন জুয়েল রানা (২৭)।

সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে এখনও স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন জুয়েলের মা-বাবা। কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে অভাব অনটনে দিন পার করছেন তারা। তাদের অভিযোগ, জুয়েল শহীদ হওয়ার পর যেসব সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া গেছে তার সবই তার স্ত্রী পেয়েছেন। জুলাই শহীদের মা-বাবা হিসেবে সরকারি অনুদান ও ভাতা সমবণ্টনের দাবি জানান জুয়েলের মা-বাবা।

জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত কাজের ফাঁকে ফাঁকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সফিপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় নিয়মিত মিছিলে অংশ নেন জুয়েল। ৫ আগস্ট মিছিল করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সন্তান জুয়েল।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন ব্যাপারী আর জমিলা বেগম দম্পতির ছেলে জুয়েল রানা। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন জুয়েল। তিনিই বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ দিতেন। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছিলেন পাশের গ্রামে। একসময় ছেলে জীবিকার টানে ঢাকায় গিয়ে পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি নেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ঈদে দুই কন্যাসহ বাড়িতে আসতেন সপরিবারে। তার ইচ্ছা ছিল মেয়েদের পড়ালেখা শেষ হলেই বাড়ি ফিরবেন।

সন্তান হারিয়ে দিশাহারা, সহযোগিতার সমবণ্টন চান শহীদ জুয়েলের মা

জুয়েল রানার মা জমিলা বেগম বলেন, জুয়েল নিহত হওয়ার পর অনেক সুবিধা এসেছে, কিন্তু সেসব সুবিধা তারা সঠিকভাবে পাননি। কারণ জুয়েলের মরদেহ দাফনের দুইদিন পর তার স্ত্রী দুলালি বেগম দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। যদিও এখন সে গাজীপুরের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করছে। তার সঙ্গে বসবাস করছে জুয়েলের বড় মেয়ে। ছোট মেয়েটিকে রেখে গেছে তার নানার বাড়িতে।

তিনি বলেন, সন্তান হারানো দুঃখ বড় কঠিন। তারপরও মাঝেমধ্যে ওর সন্তান দুটোকে দেখতে পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। দূর থেকেই দোয়া করি ওরা যেন ভালো থাকে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আবেদন, সারাদেশে জুলাই যোদ্ধাদের সরকার নানাভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। জুলাই শহীদের বাবা-মা হিসেবে সেই প্রাপ্যটা যেন সঠিকভাবে পাই। অর্থাৎ সরকারিভাবে যে অনুদান ও ভাতা আসবে তার যেন সমবণ্টন করা হয়।

তবে শহীদ জুয়েল রানার স্ত্রী মোছা. দুলালি বেগম বলেন, আমি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমার শাশুড়ি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। সুযোগ-সুবিধা পেলে গার্মেন্টসে চাকরি করতাম না। পেটের দায়ে বর্তমানে গার্মেন্টসে চাকরি করছি।

শালমারা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা ৫ আগস্ট স্বৈরচারী শেখ হাসিনার দোসরদের গুলিতে শহীদ হন। তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। সংসার চলতো জুয়েলের আয়ে। কিন্তু এখন সে আয় বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে রয়েছে পরিবারটি। সরকারিভাবে যে সুযোগ-সুবিধা আসে তা যেন সমবণ্টনের মাধ্যমে স্ত্রী, সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা-মা পান সে ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে শালমারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শহীদ জুয়েলের জন্য সরকারিভাবে যে অর্থ ও সুযোগ সুবিধা আসবে তা যেন বাবা-মা, তার সন্তান এবং স্ত্রীর মধ্যে সমবণ্টন হয় সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে সহায়তা দেওয়া দরকার তা অব্যাহত থাকবে।

আনোয়ার আল শামীম/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।