পায়রার ভাঙন

‘একটু জমি বাঁচিয়ে ঘর করি, আবার ভেঙে যায়’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৭:০০ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পায়রা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে পটুয়াখালী সদরের চান্দুখালি গ্রাম/ছবি-জাগো নিউজ

‘ছোটবেলা থেকে ভাঙন দেখে আসছি। আগে নদী ধীরে ধীরে ভাঙতো। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ভয়াবহভাবে ভাঙছে। কোনোরকমে একটু জমি বাঁচিয়ে ঘর করি, আবার ভেঙে যায়। আবারও ভাঙন। এবার কোথায় যাবো, কী করবো তার কোনো ঠিক নেই।’

আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের চান্দুখালি গ্রামের বাসিন্দা সুনীল করাতি।

চান্দুখালি গ্রামের উত্তর পায়রা নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে সব কিছু। গ্রামজুড়ে অসহায় মানুষের আর্তনাদ। কেউ বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরে চলে গেছেন, কেউবা পাশের জমিতে নতুন করে ঘর তুলে আবারও ভাঙনের কবলে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙনে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি—সব নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজারের বেশি পরিবার। কেউ স্থানান্তরিত হয়েছেন অন্যত্র, কেউবা নদীর পাশেই নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে আবারও ভাঙনের কবলে পড়ছেন।

‘একটু জমি বাঁচিয়ে ঘর করি, আবার ভেঙে যায়’

অনেকে রাস্তাঘাট বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে।

আরও পড়ুন:

স্থানীয় বাসিন্দা ওমেস করাতি জানান তাদের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ৩-৪টা বাড়ি ছিল। একে একে সব নদীতে গেছে। এখন কান্দি বেঁধে, মাটি কেটে, বালি ফেলে একটা ঘর বানিয়েছি, তাও নদী ধরছে (আক্রান্ত হচ্ছে)। আর কিছু করার নেই।’

ইউসুফ আলী শিকদার নামের আরেকজন বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে জমির ২৫-৪০ শতাংশ নদীতে চলে যাচ্ছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ ঢাকা চলে গেছেন, কেউ রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলঘরও ভেঙে গেছে। এই ভাঙন কেউ থামাতে পারছেন না। আবার কেউ উদ্যোগও নিচ্ছেন না। আমরা চরম অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি।’

‘একটু জমি বাঁচিয়ে ঘর করি, আবার ভেঙে যায়’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, সম্প্রতি ভাঙনে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিকল্প পথ নির্মাণের জন্য কাজ হাতে নিয়েছি। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, পায়রা নদীর দুপাশে মির্জাগঞ্জ ও পটুয়াখালী সদরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনরোধে একটি সমীক্ষা প্রকল্প এরইমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।