কক্সবাজার

থানা হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক ওসিসহ ৯ জনের নামে মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হাজতে দুর্জয় চৌধুরী (২৭) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। মৃত্যুর ২২ দিন পর আদালতের নির্দেশে থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও চার পুলিশ সদস্য এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. মামুনুর রশীদ মামলাটি গ্রহণ করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।

নিহত দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তথ্য ও সেবা কেন্দ্র।

মামলার আসামিরা হলেন- চকরিয়া থানার তৎকালীন ওসি শফিকুল ইসলাম, এএসআই মহিউদ্দীন, কনস্টেবল মহিউদ্দীন ও ইসরাক, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম, সহকারী শিক্ষক জসীম উদ্দিন ও মোস্তফা কামাল, অফিস সহায়ক পারভেজ এবং বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নুর মোহাম্মদকে।

এর আগে দুর্জয়ের বাবা থানায় এজাহার দিলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম থাকায় সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।

নিহত দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভা ৪ নম্বর ওয়ার্ড ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে। তিনি চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর কাম অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম অভিযোগ করেন, দুর্জয় বিদ্যালয়ের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সেই অভিযোগে ২১ আগস্ট রাতে দুর্জয়কে থানায় সোপর্দ করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানায় জিডি করে হাজতে রাখা হয় তাকে।

সিসিটিভি ফুটেজে রাত ১টা ২৭ মিনিটে দুর্জয়কে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। কিন্তু ভোররাত ৪টার দিকে থানার ভেতরে শার্ট পেঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটা আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক আর পুলিশ মিলে ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, আমরা থানায় এজাহার দিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম থাকায় সেটি মামলা হিসেবে নেয়নি। আদালতের দ্বারস্থ না হলে ন্যায়বিচারের আশা করতে পারতাম না।

ঘটনার পর পুলিশ চাপের মুখে ওসি শফিকুল ইসলাম, এএসআই মহিউদ্দীন ও দুই কনস্টেবলকে ক্লোজড করে।

তবে সাবেক ওসি শফিকুল দাবি করেন, ঘটনার রাতে তিনি থানায় ছিলেন না। ভোরে ফিরে দুর্জয়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখেন।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, থানার ভেতরে আটক অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলে তার দায় পুলিশ এড়িয়ে যেতে পারে না। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠন এরই মধ্যে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, হেফাজতে মৃত্যু নতুন নয়, কিন্তু চকরিয়ার এই ঘটনাটি যেন হত্যাকাণ্ডের আকার নিয়েছে। তারা বলছেন, দায়ীদের বিচার না হলে আরও অনেকে একই পরিণতির শিকার হতে পারে।

সায়ীদ আলমগীর/এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।