অভাবে যমজ সন্তান বিক্রির খবরে ছুটে গেলেন ডিসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেত্রকোনা পৌর এলাকার নাগড়া আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দা রাজন মিয়া। থাকেন সরকারি জায়গায় টিনের একটি ঝুপড়ি ঘরে। তাতে বেশিরভাগ জায়গায় পলিথিন দিয়ে ঘেরা। বৃষ্টি এলে সারা ঘরে পানির থাকে। ছোট একটা চৌকিতে স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ জন মানুষের গাদাগাদি করে বসবাস। অভাবের তাড়নায় দুটি সন্তান বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি।

রাজন কখনও রাজমিস্ত্রীর কাজ, কখনও রিকশা চালানো আবার কখনও দিনমজুরির কাজ করেন। যখন যে কাজ পান তখন তাই করেন তিনি। কাজ না থাকলে রোজগারও নেই। অথচ ঘরে ৪ সন্তান ও স্ত্রী। বড় দুই ছেলে ৬ ও ৪ বছর বয়সী। কিন্তু অপুষ্টি ও ক্ষুধায় ভুগতে ভুগতে ওদের দেখলে মনে হয় ৩ ও ২ বছর বয়স। পরের দুটো সন্তান যমজ (একটা ছেলে, একটা মেয়ে)। মাত্র দু’মাস বয়স। কিন্তু এরাও মায়ের বুকের দুধ পায় না। কোনো কোনো দিন খেতেই পান না। কৌটার দুধ কিনে খাওয়ানোরও সাধ্য নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন তারা যমজ বাচ্চা দুটি বিক্রি করে দিবেন৷

অভাবে যমজ সন্তান বিক্রির খবরে ছুটে গেলেন ডিসি

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের মিটিং চলাকালে স্থানীয় একজন সমাজকর্মী উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানকে বিষয়টি অবহিত করেন। রাতেই নাগড়া এলাকায় জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাফিকুজ্জামান, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহ আলম, এনডি হৃত্তিক চৌধুরীকে নিয়ে রাজনের পরিবারটি দেখতে যান।

আরও পড়ুন
একমাত্র জনবল একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান সপ্তাহে একদিন 
পদ্মার এক পাঙাশ বিক্রি হলো সাড়ে ৬৩ হাজারে 
কক্সবাজারে ভুয়া মেজর পরিচয়ে প্রতারণা, যুবক আটক 

জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, এই পরিবারটির কথা আমাকে স্থানীয় একজন সমাজকর্মী জানান। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর বুধবার রাতে সহকর্মীদের নিয়ে ছুটে যাই দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত অসহায় পরিবারটির কাছে। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার (চাল, ডাল, লবণ,তেল কয়েকটি কৌটার দুধ, কিছু চিপস, বিস্কিট) ও কিছু নগদ টাকা দিই। অনেক বুঝিয়ে ৬ বছর বয়সী ছেলেটিকে সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি করাই। বাবা, মা দুজনেই কথা দিয়েছেন তারা আর বাচ্চা বিক্রির কথা ভাববেন না। ঘরটি মেরামতের জন্য টিন চেয়েছেন, দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। একটি রিকশা কিনে দেওয়ার জন্য দাবি করেছেন, তাও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। পরিবারটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

অভাবে যমজ সন্তান বিক্রির খবরে ছুটে গেলেন ডিসি

দরিদ্র রাজন মিয়া বলেন, আমি যখন যে কাজ পাই তাই করি। কিন্তু মাঝে মাঝেই কাজ পাই না। কাজ না পাইলে সবাই না খেয়ে থাকি। শিশুরা খাবারের জন্য কান্না করে। ওদের খাবার না দিতে পেরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। এখন ডিসি স্যার এসে সহযোগিতা করেছেন। সন্তান বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।

এইচ এম কামাল/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।