সুখ থাকলেও অর্থাভাবে বিপর্যস্ত খর্বাকৃতির ফরহাদ-আরিফার সংসার

আবুল হাসনাত মো. রাফি আবুল হাসনাত মো. রাফি , ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া ও আরিফা আক্তার দম্পতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা খর্বাকৃতি মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া। প্রায় ২ বছর আগে তিন ফুট উচ্চতার ফরহাদ আড়াই ফুট উচ্চতার আরিফা আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ভালবাসা, বোঝাপড়ায় গড়া এই দম্পতির সংসারে সুখের অভাব ছিল না। তবে সম্প্রতি শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন ফরহাদ। এতে তাদের সংসারে নেমে এসেছে অভাব-অনটন।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের উলচাপাড়ার মাটিকাটার শ্রমিক মন মিয়ার ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে ফরহাদ হচ্ছে বড় সন্তান। এই পরিবারের একমাত্র ফরহাদ মিয়াই শারীরিক উচ্চতায় ছোট। প্রায় ২ বছর আগে সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের পুথাই গ্রামের আলী আকবরের মেয়ে আরিফা আক্তারকে বিয়ে করেন ফরহাদ। আরিফাও শারীরিক উচ্চতায় ছোট। বিয়ের পর ফরহাদের বাবা তাদের দুজনকে আলাদা করে দেন। এরপর অন্যের জায়গায় বছরে ৭ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে ঘর তুলে সংসার শুরু করেন ফরহাদ।

নতুন এই সংসারে তাদের সুখের অভাব ছিল না। ফরহাদ মিয়া পেশায় রূপার চেইন তৈরির কারিগর। চেইন বানিয়েই সুখে সংসার গড়েন তিনি। প্রতি চেইনে ১৩ টাকা করে আয় করেন ফরহাদ। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬টি চেইন তৈরি করতে পারেন। তবে সম্প্রতি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন দিনে ৭ থেকে ৮টি চেইন তৈরি করতে পারেন। সেই অনুযায়ী বর্তমানে তাদের দৈনিক আয় ১০৪ টাকা। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতায় তিন মাস পরপর পান ২ হাজার ৫৫০ টাকা। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই অর্থে দুজনের সংসার চালিয়ে নেওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে তাদের সংসারে হানা দিয়েছে অর্থাভাব।

সুখ থাকলেও অর্থাভাবে বিপর্যস্ত খর্বাকৃতির ফরহাদ-আরিফার সংসার

ফরহাদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমি রূপার চেইনের কারিগর। এছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। আগে প্রতিদিন দুই আড়াইশো টাকার কাজ করতে পারতাম। এতে সুন্দরভাবে চলা যেত। দুই বছর আগে আমি বিয়ে করেছি। বিয়ে পর বাবা আমাদের পরিবার আলাদা করে দিয়েছে। এখন চাপ বেড়েছে। দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আগের মতো কাজ করতে পারি না। সারাদিনে ৭ থেকে ৮টি চেইন তৈরি করতে আমার কষ্ট হয়। এগুলো বানিয়ে যে টাকা আয় করি তা দিয়ে চলা যায় না।

আরও পড়ুন:
৩ ফুট উচ্চতার বরের সঙ্গে আড়াই ফুটের কনের বিয়ে
আঁধার ঘরে ক্ষুধা পেটে দিন কাটে বৃদ্ধ দম্পতির
ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধ

ফরহাদের স্ত্রী আরিফা আক্তার বলেন, ফরহাদ খুব ভাল মানুষ। তার কাজে আমিও সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আমাদের সুখের কমতি নেই। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ অভাব দেখা দিয়েছে।

ফরহাদকে কাজ দেওয়া স্বর্ণ শিল্পালয়ের মালিক সাদ্দাম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ফরহাদ আগে ভালো কাজ করতে পারতেন। এখন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। ভালোভাবে কাজও করতে পারছেন না। এখন একশো টাকার কাজ করতেও তার কষ্ট হয়। আয় করতে না পারলে কিভাবে সংসার চালাবে?

স্থানীয় বাসিন্দা তারেক উদ্দিন বলেন, ফরহাদকে দেখলে খুব খারাপ লাগে। রূপার কারিগর হিসেবে তার ভালো সুনাম ছিল। দিন দিন তার অবস্থা অবনতির দিকে। এখন তার সংসারও আছে। তাকে স্থায়ীভাবে কিছু করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে ভালো হতো। আমরা চাই সরকার তার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

রামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবু কালাম বলেন, সরকারিভাবে ফরহাদকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬ মাস পরপর ১০ কেজি চাল পান। কিন্তু তা একটি পরিবারের জন্য কিছুই না।

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এনএইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।