ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধ

মো. কামরুজ্জামান মিন্টু মো. কামরুজ্জামান মিন্টু , জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মেশিন দিয়ে হালিম উদ্দিনের মাথার জট ও চুল জোর করে কেটে দেন কয়েকজন ব্যক্তি। ছবি/ সংগৃহীত

চুলে জট। রয়েছে লম্বা দাড়িসহ গোঁফও। বাউল ফকিরের মতো দেখতে বয়ষ্ক এই ব্যক্তিকে হঠাৎ করেই কয়েকজন টার্গেট করেন চুল কাটার। এসময় রক্ষা পেতে দেন দৌড় তিনি। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা ও মাথায় পাগড়ি পরা দুজন তাকে জাপটে ধরেন। মেশিন দিয়ে তার মাথার জট ও চুল জোর করে কেটে দেন। এসময় চিৎকার করে বৃদ্ধ বলতে থাকেন ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাটি গত কোরবানির ঈদের আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে ঘটলেও সম্প্রতি এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালিম উদ্দিন আকন্দ উন্মাদ, পাগল কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। সংসার জীবনে তার ছেলে-মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ জট ছিল তার মাথার চুলে। হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরাণ (র.) এর ভক্ত তিনি। একসময় তিনি কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু এখন ‘ফকিরি’ হালে থাকেন। নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান। তিনি এলাকায় হালিম ফকির হিসেবে পরিচিত। ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের লোকজন ওই বৃদ্ধের চুল কেটে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।

ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধ

স্থানীয়রা জানান, গত কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে হালিমের মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেয়। ঘটনার সময় বাধা দিতে গেলে এই বৃদ্ধের ওপর শারীরিক নির্যাতন ও বল প্রয়োগ করা হয়। হালিম উদ্দিনের সঙ্গে যা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অন্যায়। এসব বিষয়ে সরকারের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন-

ফরিদা পারভীনের স্মরণানুষ্ঠানে চুল কেটে প্রতীকী প্রতিবাদ
গ্রামজুড়ে চলছে চুলার আগুনে বাঁশ সেঁকা
‘পাওনা টেহা দেয় না, তাই লজ্জা দিতে এই কাম করছি’

সাদ্দাম হোসেন নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, সমাজে প্রত্যেকটা মানুষেরই স্বাধীনভাবে চলার অধিকার রয়েছে। কারো স্বাধীনতায় অন্য কারো হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বৃদ্ধ ব্যক্তির সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শুধু ময়মনসিংহে নয়, যেন বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

ঘটনাটির তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম।

তিনি বলেন, হালিম তরিকায়ে নক্সবন্দিয়া ধারায় অনুরক্ত। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির দাবি করছি।

ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধ

বক্তব্য জানতে চাইলে হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশের সোহরাব হোসেন আশরাফী বলেন, বৃদ্ধের স্বজনরা তার চুল কেটে দিতে আমাদের অনুরোধ করেন। পরে ঢাকা থেকে কাশিগঞ্জ এসে চুল কাটা হয়েছে। আমাদেরকে অনুরোধ করায়, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেখানে গিয়ে চুল কাটা হয়েছে।

তবে হালিম উদ্দিন আকন্দের বড় ছেলে জানিয়েছেন, তারা কাউকে চুল কাটতে খবর দেননি। বাবার চুল থাকার কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে না। হয়ত এলাকার কারও মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে চুল কেটে চলে যান ওইসব লোকজন। জোরপূর্বক চুল কাটা কোনোভাবেই মানবিক কাজ হতে পারে না।

বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার তো শক্তি কোলাই না। ৮-১০ জনে ধইরাললে কী করণ। আমারে ফালায়া দিয়া হুতাইয়া চুল কাটছে। হেইবালা আমি বেহুঁশ হয়া গেছিলাম। হেই থাইক্কা আমি কামকাজ করতে পারি না, বাজারে আইতারি না, ঘর-বৈঠক (ঘরবন্দি) আমি। নিজেরে আড়াল কইরা চলছি। রোগী ঝাড়তে পারি না। আসকা মাইরা শইল বেহুঁশ হইয়া যায়, মাথাত পানি ঢালন লাগে। যারা চুল কাটছে তাদের বিচার মালিক (আল্লাহ) করবো।’

এ বিষয়ে তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, আমরা বৃদ্ধের খোঁজ-খবর নিয়েছি। তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।