ঠাকুরগাঁওয়ের প্রান্তিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র

চিকিৎসক আসেন ইচ্ছামতো, মেলে না ওষুধ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৭:২৮ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রান্তিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চেম্বারে নেই চিকিৎসক

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রান্তিক জনগণের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কোথাও নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, কোথাও আবার নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রগুলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও জেলার অনেক ক্লিনিক খোলে দেরিতে এবং বন্ধ হয়ে যায় আগেভাগেই। একই সঙ্গে জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথাসহ ২২ ধরনের ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রেই মেলে মাত্র ২ থেকে ৩ ধরনের ওষুধ। কোথাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।

সদর উপজেলার নারগুন, মোহাম্মদপুর, রহিমানপুর, ঢোলারহাটসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ, অনেক দূর থেকে ক্লিনিকে আসলেও কাঙ্ক্ষিত ওষুধ পাওয়া যায় না। আবার কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না।

নারগুন এলাকার জয়নাল নামে একজন সেবাপ্রত্যাশী বলেন, এখানে আসলে অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে মেলে মাত্র ২ থেকে ৩টি। অনেক সময় ডাক্তারও থাকেন না।

চিকিৎসক আসেন ইচ্ছেমতো, মেলে না ওষুধ

জরিনা নামে এক বৃদ্ধ নারী বলেন, আমি বেশ কয়েকবার ক্লিনিকে এসেছি, যতবার এসেছি ততবারই বলে এখন মাসের শেষ ওষুধ নেই। এভাবে আসা যাওয়া করতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়।

আশরাফুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ক্লিনিকের ডাক্তার কোনোদিন ১১টায় আসে আবার ১টার দিকে চলে যান। কোনো কোনো দিন আসেন না। আসলেও বলেন ওষুধ নেই। সরকার যে এতো ওষুধ দেয় আমাদের গরিব মানুষদের জন্য তাহলে এই ওষুধগুলো কোথায় যায়?

আরও পড়ুন:
‘ডাক্তারও নাই ওষুধও নাই, হামরা কি বিনা চিকিৎসায় মরি যামো?’
একমাত্র জনবল একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান সপ্তাহে একদিন
‘সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি, ওরস্যালাইনও নেই যে দেবো’

অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) জানান, ওষুধ সংকটের কারণে রোগীদের সামনে বিব্রত হতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল বাসার মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, ওষুধের সংকট নেই। তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকছে কি না, তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চিকিৎসক আসেন ইচ্ছেমতো, মেলে না ওষুধ

অন্যদিকে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুদ্দীন মোল্লা জানান, ওষুধ পর্যাপ্ত নেই এটা শুধু ঠাকুরগাঁও জেলায় না সারাদেশে ওষুধ সংকট চলছে। তবে খুব শিগগিরই ওষুধ ও জনবল সংকটের সমাধান করা হবে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ে মোট ১৪৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ৫৪টি ইউনিয়নে। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে ৪৬টি। কিন্তু জনবল সংকট ও ওষুধের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

তানভীর হাসান তানু/এনএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।