রংপুরে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ১১:১৪ এএম, ০১ অক্টোবর ২০২৫

রংপুরের পীরগাছায় আটজন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে আটজন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন। ছাড়া পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

গত আগস্টের শুরুতে হঠাৎ করে পীরগাছায় একের পর এক গবাদি পশুর মৃত্যু হতে থাকে। এরপর টনক নড়ে স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের। পরে রোগের প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছায় গিয়ে ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন-
খাগড়াছড়িতে সেই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের আলামত পায়নি মেডিকেল বোর্ড
বছরের পর বছর যায় সড়কের দুর্ভোগ কাটে না
নারীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা, আরতি-আরাধনা সবই করছেন নারীরা

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ২০ জন রোগী আছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, সব মিলে ৫০ জন রোগীর তথ্য আমাদের কাছে আছে। যারা আক্রান্ত, তারা যাতে শঙ্কিত না হন, এজন্য তাদের সচেতন করতে কিছুদিন আগে আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম গিয়েছিল, সেখানে ১৫-২০ জন রোগীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, যাদের ৯০ শতাংশ সুস্থ হয়েছেন।

অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার দুজনের মৃত্যু নিয়ে তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, মারা যাওয়া দুজনের মেডিকেল রিপোর্ট তারা (আইইডিসিআর) দেখেছেন। এ দুটি মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে নয়। তবে উভয়ের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল।

পীরগাছার স্থানীয় খামারিরা জানান, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর জুড়ে অনন্তরাম, দেউতি, পূর্ব পারুল, আনন্দী ধনীরামসহ কয়েকটি গ্রামে অন্তত দুই শতাধিক গবাদি পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরমধ্যে অনন্তরাম গ্রামের মোজাফফর মিয়ার তিনটি গরু ও চারটি ছাগল, খোকা মিয়ার তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল, শাহ আলম মিয়ার একটি গরু, শফিকুল ইসলামের দুটি ছাগল, আমিরুল ইসলামের দুটি ছাগল, দশগাঁ এলাকার খামারি মশিয়ার রহমানের একটি গরু এবং সরকারটারী গ্রামের খুরশিদ আলমের লক্ষাধিক টাকার একটি গরু মারা গেছে।

অনন্তরাম গ্রামের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন বলেন, দুপুরে গরুর শরীরে জ্বর দেখে স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাই। পরের দিন সকাল হতেই গরুটি মারা যায়। এভাবে আমার তিনটি গরু ও তিনটি ছাগল মারা গেছে। বাধ্য হয়ে বাকি গরুগুলো পানির দামে বিক্রি করেছি।

খামারি মশিয়ার রহমান বলেন, লাখ টাকার গরু বাঁচাতে পারিনি। ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল।

স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন বলেন, আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল পীরগাছায় গিয়ে ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। এটা শুধু পীরগাছা নয়, পরবর্তী সময়ে কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরেও আমরা একই ধরনের উপসর্গের রোগী পেয়েছি। ইতিমধ্যে আরও আট রোগীর নমুনা আইইসিডিআরে পাঠানো হয়েছে। সেটার রিপোর্ট (প্রতিবেদন) এখনো আসেনি।

অসুস্থ গবাদিপশু জবাই ও অসুস্থ প্রাণীর মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। এ সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোগটা যেহেতু প্রাণী থেকে আসে, এটা প্রতিরোধে মূল কাজ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ দফতরের।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু ছাইদ জাগো নিউজকে বলেন, পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্তের পর পার্শ্ববর্তী সব উপজেলাসহ রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া ও অন্য উপজেলাতেও গবাদি পশুর ওপর আমাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর মিঠাপুকুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে তিন ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এটা ফ্রিজে রাখা মাংস থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, অ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নতুন করে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু পাওয়া যায়নি।

জিতু কবীর/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।