শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জামিনে মুক্ত, ছাত্রজনতার ক্ষোভ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শেরপুর
প্রকাশিত: ০৫:৩৫ পিএম, ০১ অক্টোবর ২০২৫
শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল

শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল হত্যা মামলাসহ সাত মামলায় আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশিজনরা।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

এ ঘটনায় জেলা বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সমালোচনার ঝড়।

শেরপুর জেলা কারাগারের জেলার আব্দুস সেলিম জানান, অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল গত ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের আদেশে শেরপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পরে জেলগেট থেকে ওই দিনই আবারও গ্রেফতার হন। ২৮ সেপ্টেম্বর শেরপুর আদালত থেকে চন্দন কুমার পালের জমিন হলে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি মুক্তি পান।

এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে জামিনের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মামুনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ও হত্যা মামলাসহ সাতটি মামলার আসামি, হাসিনা সরকারের দোসর ফ্যাসিস্ট চন্দন কুমার পাল কিভাবে জামিন পেলেন? তার পক্ষে যেসব আইনজীবী সাফাই গেয়েছেন তাদের বিবেক ফ্যাসিবাদী আমলে মৃত ছিল। গত ১৬ বছর তিনি পিপি পদে থেকে ভিন্নমতের নাগরিকদের জুলুম, মামলা দিয়ে কারাগারে রেখেছেন তা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। আমরা যতটুকু খবর পেয়েছি, তিনি ইতিমধ্যে ভারতে চলে গেছেন। যারা এই খুনির সাফাই আদালতে করেছেন তাদেরও একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

শেরপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আরিফ আহমেদ বলেন, জুলাই আন্দোলন ঠেকাতে যিনি অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন টাকার বিনিময়ে তার পক্ষে যারা আদালতে সাফাই করেছেন তাদের মুখ দ্রুতি জনগণ উন্মোচন করবেন। যতটুকু জানতে পেরেছি, চন্দন কুমার পাল জামিন পেয়েই ভারতে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু যাদের সহযোগিতা পালিয়েছেন তার দেশেই রয়েছেন, তাদেরকে জনগণ ছাড়বে না।

জেলার এবি পার্টির সদস্যসচিব মুকসিতুর রহমান হিরা বলেন, এখনো রক্তের দাগ মুছে যায়নি। কিভাবে আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতাকে জামিনে সহায়তা করা হলো? যারা সহায়তা করেছেন তারা কিভাবে বিবেককে বিসর্জন দিয়েছেন তা জানি না।

আরও পড়ুন:
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার
‘সুশাসন, ভোট ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

এনসিপির জেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার লিখন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রজনতার রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। চন্দন কুমার পাল শেরপুরের শহীদ মাহবুব, সবুজ ও সৌরভ হত্যাসহ ছাত্রজনতার আন্দোলন ঠেকাতে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এমন একজন অপরাধীর জামিন দেওয়ার বিষয়টি শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে স্বৈরাচারের পতাকা উত্তোলনের শামিল। আমার ভাইদের হত্যার সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ জড়িত এমন অপরাধীরা কেনো জানি দ্রুত জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে। তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে এসে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় চন্দন কুমার পিপি থাকাবস্থায় ভিন্নমতের মানুষদের এমন কোনো জুলুম নেই, যা তিনি করেননি। ছাত্রজনতার আন্দোলন ঠেকাতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমন একজন প্রকাশ্য অপরাধীর জামিনের সঙ্গে নিশ্চয়ই কোনো একটি মহল জড়িত। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের মুখ উন্মোচন জরুরি। তাদেরকেও জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ পলাশ বলেন, আমরা জামিন পেলেই পুলিশ নতুন নতুন মামলা দিয়ে আবারও জেলে পাঠাতো। অথচ হত্যা মামলাসহ সাত মামলার আসামি কিভাবে মুক্তি পেয়ে দেশ ছাড়ল।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, কিন্তু কিভাবে হলো জানি না।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর চন্দন পালকে ভারত যাওয়ার সময় বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে শেরপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

মো. নাঈম ইসলাম/এনএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।