ফরিদপুরের হরি মন্দিরে ৫১ সতীপীঠে ১৫১ প্রতিমা, দর্শনার্থীদের ভিড়
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় শ্রী শ্রী হরি মন্দিরের মণ্ডপে ৫১টি সতীপীঠ নিয়ে ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এতে সনাতন ধর্মের চার যুগের দেব-দেবীদের জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়। এদিকে অনন্য এ প্রদর্শনী দেখতে হাজারো ভক্ত-দর্শনার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মন্দিরে ভিড় করছেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এবারের দুর্গাপূজা। তবে এ মণ্ডপের পূজা আগামী সোমবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত চলবে।
হরি মন্দির সার্বজনীন মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা পাঁচ জন প্রতিমা শিল্পী এখানে ৫১টি পীঠ নিয়ে মোট ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মণ্ডপে ৫১টি পীঠ নিয়ে মোট ১৫১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিমা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। এক প্রতিমা ঢুলি-ঢোল বাজাবে, অন্যটি মোমবাতি জ্বালিয়ে আরতি দেবে। দুর্গার প্রতিমার পায়ের নিচে লাগানো বাঘটির মুখাবয়ব নড়ে। ফলে এ দৃশ্য ভক্তদের নজর কেড়েছে। প্রতিদিন এ মণ্ডপে পূজা দেখতে ভিড় করছেন হাজারো ভক্ত-দর্শনার্থীরা। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত এ মণ্ডপে লাখো ভক্ত-দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়।

সালথা উপজেলার জদুনন্দী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রাম থেকে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হরি মন্দিরে পূজা দেখতে এসেছেন হরিদাস মজুমদার।
তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন মিলে মোট ২৫ জন এই ডিজিটাল পূজা দেখতে এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে। অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আলফাডাঙ্গার নোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিমলা মন্ডল বলেন, প্রতিদিনই পূজা মণ্ডপে আসা হয়। এবার ডিজিটাল প্রতিমা দেখতে স্থানীয় ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজারও ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভিড়ে হচ্ছে মণ্ডপ এলাকা।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কলাগাছি থেকে পূজা দেখতে আসা ধিরাজ মন্ডল বলেন, এমন আয়োজনের কথা শুনে পূজা দেখতে এসেছি। এতগুলো সতীপীঠ এক জায়গায় দেখে ভক্তদের খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে সাধারণত একজন ভক্তের পক্ষে এতগুলো জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। এখানে একটি মণ্ডপে সব আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আজ বিজয়া দশমী, দেবী বিসর্জন
নারীদের উদ্যোগে দুর্গাপূজা, আরতি-আরাধনা সবই করছেন নারীরা
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী হরি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ৫১ সতীপীঠ বলতে বোঝায় হিন্দু ধর্মের সেই পবিত্র স্থানগুলো যেখানে দেবী সতীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এই পীঠগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিমাগুলো তৈরি করতে ভারত থেকে পাঁচ জন শিল্পী আনা হয়। এগুলো তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে লাখো ভক্ত-দর্শনার্থীদের সমাগমের কথা চিন্তা করে আমাদের মণ্ডপের এ পূজা লক্ষ্মী পূজার পরদিন অর্থাৎ সোমবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত চলবে। এরপর বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল জলিল বলেন, এবারের দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলো সম্পর্কে প্রশাসন ব্যাপকভাবে সচেতন রয়েছেন। প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং পুলিশ ও প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
র্যাব-১০ কোম্পানি কমান্ডার তারিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে ফরিদপুরের পূজা মণ্ডপে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
ফরিদপুর জেলায় মোট ৭৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে। বেলতলায় মহা ষষ্ঠীর পূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব শুরু হবে। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজার পর ২ অক্টোবর রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি হবে।
এন কে বি নয়ন/এনএইচআর/এএসএম