১২ ঘণ্টা ধরে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা নদীর পানি। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ও সড়কসহ বহু এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অন্তত ১২ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি ক্রমাগত বাড়ছে। রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়। সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত একই পরিমাণ পানি রয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার বহু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে মাছের খামার, রোপা আমন, শাকসবজির খেত ও চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট। এখন নৌকা ও কলার ভেলায় চলাচল করছে পানিবন্দি মানুষ।

অন্যদিকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচে, যা সোমবার সকালে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ সেন্টিমিটার নিচে। ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যায় পানি ছিল বিপৎসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার নিচে, সোমবার সকালে তা বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে পৌঁছেছে।
লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের শিউলী বেগম বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, আমাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, পানি ততই বাড়ছে। গতরাতে পানি বাড়িতে ঢুকে গেছে, সারারাত গরু-ছাগল নিয়ে কষ্টে রয়েছি। এখন বাড়িতে কোমরসমান পানি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাব না।
আরও পড়ুন-
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার শঙ্কা
লালমনিরহাটে ঝড়ে বিধ্বস্ত শতাধিক ঘরবাড়ি
তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি, লালমনিরহাটে বন্যার আশঙ্কা
সিন্দুর্না এলাকার বাসিন্দা শামসুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরের পর থেকে নদীতে পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা এখন পানিবন্দি। গত দুই মাস ধরে বারবার পানি ঢুকে আবার নেমে যাচ্ছে, এতে আমরা ভীষণ কষ্টে আছি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শায়খুল আরিফিন বলেন, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় এখন রোপা আমন, চিনাবাদাম ও সবজির চাষ চলছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই প্রবণতা থাকতে পারে। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত দাস বলেন, উজান আর বাংলাদেশের কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।
মহসীন ইসলাম শাওন/এফএ/জেআইএম