নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য


প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, ২০ জুন ২০১৬

নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ভর্তি নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্দেশিকা ও ভর্তি ফরমের নামে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভর্তি বাণিজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। কলেজ কর্তৃপক্ষ রশিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে এ টাকা সংগ্রহ করছেন।

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়কের নির্দেশেই অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ না থাকায় এটা বিধিবহির্ভূত। কিন্তু বাংলাদেশের সব কলেজেই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন সংখ্যা ২ হাজার ৩৫০। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪১০টি, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১১২০টি ও মানবিক বিভাগে ৮২০টি আসন রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের মাধ্যমে প্রায় আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিধিমালা অনুযায়ী মেধা তালিকায় স্থান প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি কমিটির কাছ থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে। পরে কলেজের নির্ধারিত ফি মোবাইল ব্যাকিং শিওর ক্যাশের মাধ্যমে জমা দেয়। শিওর ক্যাশের আইডি নম্বর দিয়ে প্রয়োজন কাগজপত্রসহ কলেজ ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়ে শ্রেণি রোল নম্বর সংগ্রহ করে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ৩১৭ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ২১৭ টাকা ও মানবিক বিভাগের ২ হাজার ২১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে ভর্তি হতে গেলে আলাদা ভাবে ক্যাশ কাউন্টারে ১০০ টাকা জমা দিয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যা বোর্ডের ভর্তি নির্দেশনা পরিপন্থী।

কলেজের দেয়ালে ভর্তিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাশ কাউন্টারে ১০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হলেও এতে অধ্যক্ষের কোনো স্বাক্ষর নেই।

ভর্তি হতে আসা মিতু আক্তার জানায়, ১০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ কেটে ফরম কিনেছি। পরে কলেজের নির্ধারিত ২০৭৭ টাকা শিওর ক্যাশের মাধ্যমে জমা দিয়েছে।

নরসিংদী সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান জানায়, গত বছর আমরা এই অতিরিক্ত ফি দেইনি। এবার কি কারণে অতিরিক্ত ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। অধ্যক্ষ স্যারের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে তিনি আমাদের কোনো কথা শুনতে রাজি হননি।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ভর্তির ফরম ও কলেজের তথ্য বিবরণী এর জন্য এই ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর বিষয়টি অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগ স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের ভর্তি নির্দেশিকা ও ফরম বাবদ এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সব কলেজেই এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। তবে এই অর্থ আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ না থাকায় এটা বিধিবহির্ভূত। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তিনি বিব্রত হবেন বলে সাংবাদিকদের প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।