চুয়াডাঙ্গা

তিন বছরেই বেহাল ৯ কোটি টাকার রাস্তা

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার পাঁচটি আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে অন্যতম চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়ক। সড়কটি নতুনভাবে সংস্কার হওয়ার পরও চলাচলের অনুপযোগী। পুরো সড়ক খানা-খন্দে ভরা। আড়াই বছরের মধ্যে ওই সড়কে অন্তত ১০ বারের বেশি জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বারবার জোড়াতালি দিলেও কাজে আসছে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়নের আড়ালে এই সড়ক নির্মাণ হয়েছে ব্যাপক লুটপাট করে। সরকারের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নয়ন ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংস্কার কাজ শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার থেকে দামুড়হুদার ডুগডুগি বাজার পর্যন্ত ৯.৭ কিলোমিটার আয়তনের এ কাজের ব্যয় ছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিল জহিরুল লিমিটেড। কাগজ-কলমে জহিরুল লিমিটেড হলেও বাস্তবায়ন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরফিন আলম রঞ্জু। সড়ক সংস্কার কাজ শেষ হয় ওই বছরের নভেম্বর মাসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কারের পরও চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে পুরো সড়কটি। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। আবার কোথাও বড় বড় খানাখন্দ ও গর্ত। নানা ধরনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এই সড়কটি দর্শনা, মুজিবনগর ও জীবননগর-কোর্টচাঁদপুর-কালিগঞ্জ সংযোগ সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় প্রতিক্ষণই যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের বুকজুড়ে রয়েছে এই প্রতিবন্ধকতা।

স্থানীয়রা জানান, সংস্কারের পর চলাচল আরও সহজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সড়কের এমন অবস্থায় অনেকেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণও হারিয়েছেন।

তিন বছরেই বেহাল ৯ কোটি টাকার রাস্তা

এই সড়কটি নিয়মিত ব্যবহারকারী দর্শনা এলাকার বাসিন্দা আওয়াল হাসান বলেন, তিনি এই পথে প্রায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন। নতুন সংস্কারের পর ১৫ দিন সড়কটি ভালো ছিল। এরপর থেকেই বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই খানাখন্দ মেরামত করতে অন্তত ১০বার জড়াতালি ও সংস্কার করা হয়েছে। তবুও কোনো লাভ হয়নি।

উজিরপুর এলাকার বাসিন্দা রাজিবুল হাসান বলেন, এই সড়কটি উন্নয়নের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সড়ক হলেও ঠিকমতো চলাচল করা যায়নি। প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা পকেটে ভরেছেন ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা।

ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দীন বলেন, সড়ক উঁচুনিচু ও খানাখন্দের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে কয়েকজন মারাও গেছেন। বারবার সংস্কার হওয়ার পরও সরকারের খরচ বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষই দুর্ভোগে পড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুজাত কাজী বলেন, এই সড়কটি সংস্কার না করে পুনর্নির্মাণ করা উচিত ছিল। শুধুমাত্র কার্পেটিং করার ফলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবু চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে উঁচু-নিচু রাস্তা ও খানাখন্দ সমতল করা হচ্ছে। এজন্য নিয়মিতভাবে সংস্কার কাজ চলছে। সড়কটি পুরোপুরি ঠিক করতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয় জানানো হয়েছে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।