মৌলভীবাজার

সরকারি জায়গায় ভূতুড়ে পার্ক, বৈধতা নিয়ে টানাটানি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১০:০৩ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

মৌলভীবাজার শহর ঘেঁষা মাতারকাপন এলাকায় মনু ব্যারেজের কয়েক মিটার দূরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় এক একর জায়গার ওপর পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ‘ড্রিমস্ শিশু পার্ক’। তবে জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় পার্কটিতে এখন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। শুরুর দিকে বৈধভাবে পার্কটি লিজ দিলেও মামলা জটিলতায় তিন বছর ধরে লিজবিহীন অবস্থায় আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে মামলা থাকায় ২০২২ সাল থেকে লিজ দেওয়া যাচ্ছে না এই জায়গা। আর ইজারাদারেরা বলছেন তাদের লিজের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।

তবে দর্শনার্থীদের দাবি, সরকারিভাবে এই জায়গায় একটি বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করলে মনু ব্যারেজ এলাকায় প্রচুর পর্যটক আসতো।

জানা যায়, মৌলভীবাজার শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া মনু নদী কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে সূচনা হওয়া ১৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীর ৭৩ কিলোমিটার বাংলাদেশে রয়েছে। এই নদী ঘিরে মনু নদী প্রকল্প নামে ১৯৮৩ সালে বৃহৎ সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রকল্প করা হয়। এখানে যে ব্যারেজ করা হয়েছে সেটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক আসে।

তবে এখানে ব্যারেজ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে অনেক পরিত্যক্ত জায়গা আছে। এসব জায়গার ১ একর জায়গা জুড়ে ‘ড্রিমস শিশু পার্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। তবে এই পার্কের বৈধতা নিয়ে রয়েছে নানান কথা। এখানে বিনোদনের জন্য পার্ক স্থাপন করা হলেও বাস্তবে বাচ্চাদের কয়েকটি রাইড ছাড়া আর কিছু নেই। চারিদিকে শুধু জঙ্গলে ভরপুর।

মৌলভীবাজার শহর ঘেঁষা মাতারকাপন এলাকায় মনু ব্যারেজের কয়েক মিটার দূরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় এক একর জায়গার ওপর পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১ দশক আগে এই জায়গা লিজ নিয়ে পার্ক স্থাপন করা হয়। ২০২২ সাল থেকে পার্কটি লিজের আওতায় আর নেই। যারা লিজ নিয়েছিলেন তারা মামলা করে রেখেছেন। এজন্য নতুন করে লিজ দেওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে মনু ব্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, ব্যারেজের কয়েক মিটার দূরে ‘ড্রিমস্ শিশু পার্ক’ নামে একটি পার্ক রয়েছে। এই পার্কের বাইরের দেওয়ালে একটি সাইনবোর্ডে লেখা প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা ও গেমস মূল্য ৫০ টাকা। পার্কের চারপাশে টিনের বেড়া। ভেতরে বাচ্চাদের জন্য মিউজিক নৌকাসহ কয়েকটি বিনোদন সামগ্রী থাকলেও এগুলো ঝোপ-জঙ্গলে ভরপুর। পাশে একটি আধাপাকা ঘর রয়েছে যার টিনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। এছাড়া ভেতরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এই পার্ক বৈধ না অবৈধভাবে চলছে সে বিষয়ে আমরা জানি না। তবে এখানে সরকারের প্রচুর জায়গা আছে। প্রতিদিন বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় অনেক দর্শনার্থী আসে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটক আসে। তবে এখানে ব্যারেজের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন একটি বিনোদনের জায়গা প্রয়োজন।

ঘুরতে আশা শামসুল ইসলাম নামে এক পর্যটক বলেন, এখানে যে কী পার্ক আছে, উঁকি দিয়ে দেখেই বোঝা গেছে তার করুণ অবস্থা। ভেতরে জঙ্গল, বাইরে থেকে দেখে ভয় লাগে। অনেকেই অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হবে এমন পরিবেশ থাকলে। সরকার দায়িত্ব নিয়ে সুন্দর করে পার্ক স্থাপন করুক অথবা যারা লিজ নিয়েছে তারা সুন্দর করে এটা স্থাপন করুক। এখানে পার্কের জায়গা উন্মুক্ত করলে পাশের দৃষ্টিনন্দন লেক দেখা যাবে।

তবে পার্কের ছেঁড়া একটি সাইনবোর্ডে লেখা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ইঞ্জিনিয়ার সুলতান হোসেন নামে একজন বলেন, আমরা লিজ নিয়ে পার্ক স্থাপন করেছি। আমাদের লিজের সময় এখনও আছে।

পার্কের দূরাবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের এখানে হামলা করে ভাঙচুর ও সবকিছু লুট করে নেওয়া হয়েছে। এজন্য পার্কের এই অবস্থা।

তবে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ২০২২ সালে এই পার্কের ১ একর জায়গার লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর এটা নিয়ে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে মামলা চলমান। মামলা শেষ হলে নতুন করে আবার লিজ দেওয়া হবে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।